যশোর সীমান্তে হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা উপসর্গের রোগী

মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি জুন ১৪, ২০২১, ০৫:২৯ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ সীমান্তবর্তী বেনাপোল পোর্ট থানা ও শার্শা উপজেলায় সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগী হঠাৎ বেড়ে গেছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এসব রোগীদের মধ্যে জ্বর নিয়ে ভীতি থাকলেও করোনাভাইরাস পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বলেও জানা গেছে।

গ্রামের চিকিৎসক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব উপসর্গের কথা নিশ্চিত করেছেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিলে অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বন করা ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলি জানান, সোমবার শার্শা উপজেলায় ১১ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত উপজেলায় ৪৫১ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে, যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

ডা. ইউসুফ বলেন, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন করোনা টেস্টও করা যাচ্ছে। বন্দর কেন্দ্রিক যাত্রীর কথা ভেবে ১৮ মে করোনা টেস্টের জন্য হাসপাতালে মেশিন বসানো হয়েছে। এখন এখানেই ‘র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন’ পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এরপরও অনীহার কারণে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে টেস্টের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। যারা স্বেচ্ছায় টেস্টের জন্য আসছে তাদেরকেই কেবল পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যাও কম না।

জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে ইদানীং বিপুল সংখ্যক মানুষ আসছেন জানিয়ে বাগআঁচড়া জোহরা মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমাদের কাছে করোনাভাইরাস চিহ্নিতকরণের কিট না থাকায় সর্দি, জ্বর বা গলা ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসা সন্দেহজনক রোগীদের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও যশোর সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

বাগআঁচড়া সাত মাইলের রুবা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. আহসান হাবিব রানা বলেন, সামান্য সর্দি, জ্বর বা গলা ব্যথার উপসর্গ দেখা দিলেই গ্রামের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করছে, কিন্তু তাদের এটা প্রয়োজন নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ৮০ শতাংশের বেশি রোগীরই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যাদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া বা আগে থেকে বিভিন্ন রোগের জটিলতা রয়েছে, তাদের হাসপাতালে যাওয়া জরুরি। তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম। কাদের পরীক্ষা লাগবে না লাগবে সেটা চিকিৎসকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো বলে তিনি মনে করেন।

ফার্মেসিতে সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে জানিয়ে বেনাপোল ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, এখন বেনাপোলের বেশির ভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। এভাবে অনেকে সুস্থ হয়েও উঠছেন। আবার কেউ কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বেনাপোল বাজারের গ্রাম ডাক্তার মো: মিন্টু বলেন, এখন যেসব রোগী পাচ্ছি তার বেশিরভাগই জ্বর সর্দি কাশির। অনেকের জ্বর ৮/১০ দিনও থাকছে। দিঘীরপাড় গ্রামের মোহাম্মদ আলী (২৮) ও কোহিনুর বেগম (৩২) এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছেন। তাদের জ্বর না কমায় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
যশোরের শার্শা উপজেলায় ১০২ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে।

করোনাভাইরাসের ভারতের ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা কঠোর অবস্থানে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তার কোনো প্রভাব নেই। আর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সাধারণ মানুষকে জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে বাজার-ঘাটে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।