করোনায় কত মাইনস্যের জীবন গেছে, আমার তো খালি চাকরিডা গেছে

মো. শামীম, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জুন ১৩, ২০২১, ০৭:০৩ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

ঢাকাঃ করোনায় তো কতজনের জীবনও গেছে গা। আমার তো খালি চাকরী গেছে। কি করুম? চাকুরী তো নাই। করোনায় গিলা খাইছে। কত জন রে কইলাম কেউ তো চাকরী দিলো না। এহন কিছু না পাইয়া ভ্যানডা নিয়া বাইরাইছি। শরবত বেইচা কোন রহম এহন দিন যায়। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শরবত বিক্রেতা রাসেল মোল্লা।

টসবগে তরুন রাসেল মোল্লা। গত বছরও চাকুরী করতেন ঢাকা ওয়ারীতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে বন্ধ হয়ে গেছে প্রেস। তাই বেকার হয়ে কিছুদিন কাটিয়েছে গ্রামে। পরিবার পরিজন নিয়ে ভাড়া থাকেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাবাজু গ্রামে। নিজের বলতেই কিছুই নেই। এক সময় পদ্মার ভাঙনে হারিয়েছে বাপ দাদার বসত বাড়ি। দীর্ঘ প্রায় একযুগ আগে বসবাস ছিল পদ্মার পার ঘেষা মানিকগঞ্জ জেলার হারিরাপুর উপজেলার ধুলশুড়া ইউনিয়নের আবিধারা গ্রামে। পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে স্মৃতিবিজড়িত সেই গ্রাম।

শৈশব আর কৈশোর কাটিয়ে জীবনের মাঝ বয়সে এখন রাসেল মিয়া। চোঁখের সামনে বাপ দাদার পুরোনো বাড়িটি যখন পদ্মায় বিলীন হয় তখন যেন প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে সব ই মেনে নিতে হয় তাকে। বছর খানেক আগেও সুখ ছিল সংসারে। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর জীবনে যেন অন্ধকার নেমে আসে। আর এ দিকে  করোনার কারনে ব্যবসা ছেড়েনে মালিক জাকির হোসেন। সেই সাথে রাসেলেরও গেছে চাকুরী।

এখন পরিবারে বৃদ্ধ মা, ভাই , ভাবি, রাসেল ও তার স্ত্রী  নিয়ে ৫ জনের সংসার তার। ভাই কাজ করেন ফার্ণিচারের দোকানে। কোনো রকমে চলে সংসার। অনেক খোঁজ খবর নেওয়ার পরও কোথাও হয়নি চাকুরী। বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে শরবত বিক্রি করেন রাসেল মিয়া। প্রতিদিন সকালে বের হয় বরফ, পানি , চিনি আর লবণ নিয়ে। তপ্ত রোদ উপক্ষো গ্রামের মেঠো পথ, হাট বাজার ঘুরে শরবত বিক্রি করে ৪০০/৫০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেন তিনি।

রাসেল মোল্লা বলেন, ‘‘দিন ভালো হইয়া গেলে আবার ভালা চাকরী পামু। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া করোনা মহামারীডা একটু রহম করুক। আমরা জানি কষ্টে হইলেও জীবন টা বাঁচায় রাইখা পরিবার নিয়া বাইচা থাকি’’।

সোনাবাজু গ্রামের প্রতিবেশী জাকির বলেন, এক সময় রাসেল ভালো চাকুরী করতো। কিন্তু করোনার কারনে এখন বেকার হয়ে বাড়িতে আছে ৪/৫ মাস ধরে তাই শরবত বিক্রি শুরু করছে কিছুদিন আগে।