লক্ষ্মীপুরঃ জেলার রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি ১৪ বছর ধরে টেকনিশিয়ান না থাকায় এটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ কারণে সরকারি খরচে এক্স-রে করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
কিন্তু টেকনিশিয়ান না দিয়ে আবারও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ডিসেম্বর মাসে একটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র এসেছে রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ যন্ত্রটিও টেকনিশিয়ান না থাকায় এখনও বাক্সবন্দী। গত ছয় মাসে একবারের জন্যও রোগ নির্ণয়ের কাজে লাগেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে আগের মেশিনটির টেকনিশিয়ানকে গাজীপুরে পাঠানো হয়। ওই থেকে টেকনিয়িশিয়ান চেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে মহাপরিচালকের কার্যালয় ও জেলা-উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে শতাধিক আবেদন করে বারবার জানানো ও আলোচনা করা হয়। কিন্তু এত দিনেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।
পরে যন্ত্রটি ব্যবহার না হওয়ায় ২০০৭ সালে নষ্ট হয়। এরপর আর মেরামত করা হয়নি। ফের রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য গত ডিসেম্বর মাসে একটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র এসেছে। অথচ এ হাসপাতালে ১৪ বছর আগের যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য টেকনিশিয়ান নেই। এজন্য আগেরটি ব্যবহার না করায় নষ্ট যায়। গত ডিসেম্বর মাসে নতুন এক্স-রে পৌঁছালেও সেটি এখন প্যাকেটবন্দি। কর্তৃপক্ষ এটি স্থাপন করার জন্য একাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু টেকনিশিয়ান না দিয়ে এটি স্থাপনা করেও কী লাভ হবে বলা যাচ্ছে না।
উপজেলার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। এর মধ্যে কয়েকজনের এক্স-রে করার প্রয়োজন হয়। বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে বেশি টাকা খরচ করে তাদের এক্স-রে করতে হয়, যা নদীবেষ্টিত ও নদী ভাঙনকবলিত এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা শেফালি বেগম আক্ষেপ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। টাকার অভাবে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে পারি না। এই হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি চালু থাকলে আমরা কম খরচে এক্স-রে করাতে পারতাম।
আবদুল মতিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, এক্স-রে মেশিনটি চালু থাকলে আমরা ৪০-৫০ টাকা খরচ করেই এক্স-রে করার সুযোগ পেতাম। এখন বাইরের ক্লিনিকে ৩৫০-৪০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আগের মেশিনই চলে না আবাও টেকনিশিয়ান না দিয়ে নতুন মেশিন পাঠানো রোগীদের সাথে তামাশা করা।
রায়পুর পৌরসভার মেয়র ইসমাইল খোকন বলেন, টেকনিশিয়া না দিয়ে ফের আবারও নতুন একটি ডিজিটাল এক্স-রে পাঠানোর বিষয়টি খুই দুঃখজনক ও হাসির বিষয়ও। মনে হচ্ছে এটি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয়নি। জনগণের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হলে, আগে টেকনিশিয়ান দেওয়া হতো। তারপর এক্স-রে পাঠাতো। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এটি সরকারের টাকা অপচয় করে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কেনা হচ্ছে।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পানা কর্মকর্তা ডাঃ মো. জাকির হোসেন বলেন, এক্স-রে টেকনিশিয়ান না থাকায় রোগীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। শূন্যপদটি পূরনের জন্য প্রতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এরপরও কোনো লাভ হচ্ছে না। নতুনটি স্থাপনের জন্যও একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আগের মেশিনটি টেকনিশিয়ানের অভাবে সচল করা সম্ভব হয়নি। উপজেলার হতদরিদ্র রোগীদের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে শিগগির টেকনিশিয়ান পাঠানো প্রয়োজন।