খালিয়াজুরীতে উদ্বোধনের আগেই পাকা সড়কে ধ্বস

সালাহ উদ্দীন খান রুবেল, নেত্রোকাণা জেলা প্রতিনিধি মে ২৬, ২০২১, ০৭:২৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রোকোনাঃ জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার “খালিয়াজুরী গ্রোথ সেন্টার (জিসি) কৃষ্ণপুর জিসি ভায়া বানিয়াহাটি রাস্তা” উদ্বোধনের আগেই ধসে যাওয়ায় পাকাকরণ কাজের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতি বর্ষায় যে রাস্তা দিয়ে  হাঁটু সমান কাঁদা ও বাঁশের সাঁকো ডিঙিয়ে আসা-যাওয়া করতে হতো স্কুল কলেজ পড়ুয়া শতশত শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী, সে রাস্তা পাকা করার কাজ শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ ঘুচে যাওয়ার আশা করেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তুু তাদের সে আশা নিরাশ হয়ে গেলো। উদ্বোধনের আগেই রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় ধস দেখা দেওয়ায় আবারও তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরার শঙ্কা প্রকাশ করছে গ্রামবাসী।

নেত্রকোণার খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের বানিয়াহাটি এলাকায়  ৬২ লাখ  টাকায় নির্মিত রড সিমেন্ট  কংক্রিটের (আারসিসি) সড়কটি নির্মানের  এক মাস না যেতেই প্রথম দফায় এরপর কয়েক দফায় বৃষ্টিতে ধসে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধিনে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে হাওরাঞ্চলের বন্যা ব্যাবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন(হেমলিপ) প্রকল্পের অর্থায়নে সড়কটি নির্মিত হয়েছে। এ তথ্যটি জানিয়েছেন খালিয়াজুরী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনূস আলী।

তিনি আরো জানান, ওই সড়ক নির্মাণ কাজের নাম দেওয়া হয়েছে খালিয়াজুরী গ্রোথ সেন্টার (জিসি) কৃষ্ণপুর জিসি ভায়া বানিয়াহাটি রাস্তা পাকাকরণ। সংশোধিত এবং প্রস্তাবিত প্রাক্কালন অনুযায়ি সড়কটি নির্মিত হয়েছে ৩৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য,উপরাংশে ১৪ ফুট প্রস্থের । এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ি কাজটি শেষ করার তারিখ ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর। কাজটির ঠিকাদার নেত্রকোণার মদন উপজেলার সারোয়ার জাহান।

স্থানীয়রা জানান, কাগজে-কলমে ঠিকাদার সারোয়ার জাহান হলেও কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম নামের একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা। তিনি পেশায় পাথর ও বালু ব্যাবসায়ি। তিনি সড়কটির নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করলেও সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠান এলজিইডি কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

বানিয়াহাটি গ্রামের বাসিন্দা ও খালিয়াজুরী উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক স্বাগত সরকার বলেন, ওই সড়কটি নির্মাণে ভরাট করা মাটি ভালো ভাবে আঁটসাঁট (কমপেকশন) না করেই সিসি ব্লক বসানো হয়েছে। ব্লকগুলো তৈরীতেও সিঙ্গেলসের পরিবর্তে বেশির ভাগেই দেওয়া হয়েছে মোটা বালু, ভূতু ও মরা পাথর। এসব ব্লক বসানোর সময় একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্তও করা হয়নি সঠিক নিয়মে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দিনের সামন্য বৃষ্টিতে সড়কটির অধিকাংশ স্থান ধসে পড়েছে।
       
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি নিহারেন্দু দেব রায় তপু জানান, নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে ইতিপূর্বে আরো একবার ধসেছিল সড়কটি। পরে কোন রকমে ধামাচাপা দিয়ে কিছু অংশের কাজ বাকি রেখেই সড়ক এলাকা ত্যাগ করেন ঠিকাদার। এসব বিষয়ে একাধিক বার এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা রহস্যজনক কারণে অনিয়ম রুখতে তেমন কোন পদক্ষেপ নেননি।

ঠিকাদার সারোয়ার জাহানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তবে কাজটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত শহীদুল ইসলাম জানান- নির্মিত স্থানে গভীরতা বেশি হওয়ায় সড়কটিতে ধস নামছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনূস আলী জানান- কাজটি নির্মাণে অনিয়ম হয়নি। তবে দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ করে তারপর সম্পূর্ণ টাকা ঠিকাদার নিবেন।