মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি
মে ২৬, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ শিশুদের প্রিয় ফল লিচু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় গত বছরের চেয়ে অধিক জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। ২০২০ সালে এই জেলায় ৪৫৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়। গত বছর উৎপাদন ও বাজার দর ভাল পাওয়ায় এবছর আর ৫৫ হেক্টর জমি বেড়ে ৫১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। তবে লিচুর দাম অন্য বছরের চেয়ে বেশী।
আবহাওয়া বজায় থাকার কারণে লিচুর ফলনও ভাল হয়েছে। এই জেলার সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলায় বেশিভাগ লিচু চাষাবাদ করে থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর বাজার দরও ভাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলায় ৪৯৫ হেক্টর ও জেলার অন্যান্য উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে এই বছর লিচু আবাদ করা হয়েছে৷
তবে লিচুর চাষের বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, চলতি বছর প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার লিচু বিক্রয় হবে।
এরমধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলায় সাড়ে তিনশত ৭৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় উৎপাদিত লিচু সুস্বাদু হওয়ায় দেশ-বিদেশে এ লিচুর খ্যাতি রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এখানকার লিচু ক্রয় করে নিয়ে যায়।
এখানে উৎপাদিত লিচুর মধ্যে পাটনাই, বোম্বাই, চায়না-২ ও চায়না-৩ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও জেলার সবচেয়ে বড় লিচু হাট বসে বিজয়নগরের আওলিয়া বাজারে। প্রতিদিন ভোর ৩ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জমে লিচুর হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা ভীড় করেন এই হাটে। প্রতিদিন এই বাজারে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা লিচু বিক্রয় করা হয়।গত বছর এই হাটে লিচু বিক্রয় থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৩ কোটি টাকা।
উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামোড়া গ্রামের লিচু চাষি নাজমুল হাসান বলেন, আমার লিচু বাগানটি সাড়ে তিন বিঘা জমির উপর। গত ৫/৭ বছর যাবত এই লিচু বাগানটি চাষাবাদ করে আসছি। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এই বছর ভাল ফলন হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে লিচু গাছ থেকে পেড়ে পরদিন ভোরে স্থানীয় আওলিয়া বাজারে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও বাগানে ক্রেতারা আসছেন লিচু ক্রয় করতে।
লিচু নিতে আসা লিচুর পাইকার আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, এই অঞ্চলের লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। এছাড়াও উত্তর বঙ্গ থেকে যে লিচু আনা হয়, তা ঢাকায় বা সিলেট নিতে নিতে অনেকটা গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়। দামে ও মানে আমাদের চাহিদা মধ্যে হওয়ায় বিজয়নগর থেকেই প্রতিবছর লিচু ক্রয় করে সিলেটের বাজারে নিয়ে যাই'।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুনায়েদ আল সাদী বলেন, এই বছর বিজয়নগরে ৩৫০ হেক্টরের বেশি জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। যাতে আমাদের এই বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। আমরা সময়ে সময়ে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দিয়েছি। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবং তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় আমরা চেষ্টা করেছি কিভাবে বাগান গুলোতে সেচের ব্যবস্থা করা যায়। এই সময় পানির অভাব বা বৃষ্টি বেশি হলে লিচু ফেটে যায়। আমরা আগাম এই সক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এবছর লিচু বাম্পার ফলন হয়েছে'।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রবিউল আলম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি বিভাগ থেকে মৌসুমের প্রথম দিক থেকেই কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নানান পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৪৫৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়। গত বছর উৎপাদন ও দাম ভাল পাওয়ায় এবছর জেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। হেরভেস্টার শেষ হলে জেলার ৪২০টি বাগানে ১ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন লিচুর ফলন হবে বলে প্রত্যাশা করছি। যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা।