লোডশেডিংয়ে দিশেহারা রূপগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষ

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ) প্রতিনিধি মে ২৫, ২০২১, ০১:১৯ পিএম
ফাইল ফটো

নারায়নগঞ্জঃ সোমবার রাতে টানা ৫ ঘন্টা পল্লী বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে ছিলো রূপগঞ্জের বিশাল একটি অংশ। উপজেলার তারাব পৌরসভা ছাড়া গোটা রূপগঞ্জ ছিলো বিদ্যুৎহীন। প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিলো কয়েক লাখ মানুষের। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কয়েক স্থানে গরু চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের রূপগঞ্জ জোনাল অফিসের আওতাধীন এলাকাগুলোতে অব্যাহত লোডশেডিং হচ্ছে। আকাশে মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ বন্ধ করা দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সপ্তাহে অনন্ত একদিন ‘লাইন মেরামত’ করার অযুহাত দেখিয়ে সকাল ৮ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে। অব্যাহত লোডশেডিং ও একদিন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার পরও গ্রাহককে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল গুণতে হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে প্রায় লাখো গ্রাহক। বিক্ষুব্ধ জনতা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবীতে যে কোন সময় ফুঁসে উঠতে পারে। তবে বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, রূপগঞ্জে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। অনেক সময় পোল মেরামতসহ নানা কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার রাত (২৪ মে} সাড়ে ৯ টার দিকে হঠ্যাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর পৌনে ১০ টার দিকে বিদ্যুৎ আসলেও দুই মিনিট থেকে পুনরায় আবার চলে যায় বিদ্যুৎ। এরপর রাত পৌনে ২ টায় বিদ্যুৎ আসে। টানা ৫ ঘন্টা রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্র, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, দাউদপুর ইউনিয়ন, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন, ভুলতা ইউনিয়ন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ও ভোলাব ইউনিয়ন অন্ধকারে ছিলো। বিদ্যুৎহীন থাকায় রূপগঞ্জের দাউদপুরের কয়েকস্থানে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ভোলাব, গোলাকান্দাইল, কায়েতপাড়া এলাকার কয়েক স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্র ও দাউদপুর ইউনিয়নের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, তারা রূপগঞ্জ জোনাল বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন। এই জোনে অব্যাহত লোজশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার লোডশেডিং হয়। এছাড়া সপ্তাহে একবার ‘লাইন মেরামত’ করার অযুহাত দাঁড় করিয়ে সকাল ৮ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। কোন  কোন সময় ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত গড়ায়। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকার গৃহবধূ রায়হানা সুলতানা কণা বলেন, সোমবার সকালে আড়াইঘন্টা বিদ্যুৎ ছিলোনা। এরপর দুপুরের দিকে পৌনে একঘন্টা বিদ্যুৎ ছিলোনা। আর রাতে ছিলোনা ৫ ঘন্টা। মঙ্গলবার সকালেও আধঘন্টা ছিলোনা বিদ্যুৎ। এভাবে ভেলকিবাজি খেললে এই গরমে মানুষ মারা যাবে।

তালাশকুর এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজান কারেন্টের কতা কইয়া লাভ নাই। সারাদিনে ৪/৫ বার যায়। আর হপ্তায়(সপ্তাহ}একদিন লাইন ঠিক করনের কতা কইয়া সকাল ৮ টা থেইক্যা ৫ টা পর্যন্ত কারেন্ট থাহে না। আবার বিলটা উডে(উঠে}বেশি।  বেলদি এলাকার জসিমউদ্দিন মিয়া বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই আমাদের এলাকার বিদ্যু বন্ধ হয়ে যায়। রূপগঞ্জ জোনাল অফিসের পল্লী বিদ্যুতের উপ-জেনারেল ম্যানেজার লাবিবুল বাশার বলেন, সোমবার রাতে ভুলতার গ্রীডে সমস্যা থাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বন্ধ ছিলো। বিভিন্ন জায়গায় পোল মেরামত করতে হয়। এছাড়া গাছপালা পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। মূলত রূপগঞ্জে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই।

নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রীডের সমস্যা থাকায় বিদ্যুৎ সমস্যা হয়েছিলো। যার কারণে রূপগঞ্জের বিশাল অংশ, আড়াইহাজার ও নরসিংদীর কিছু এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিলোনা।