পীরগাছাঃ হয়তো তিনি হতে পারতেন স্কুলের কোন শিক্ষক বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তা না হয়ে তিনি হয়েছেন বই বিক্রেতা। তার সহপাঠিরা কেউ হয়েছেন শিক্ষক বা কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিনি এখনও করছেন বই বিক্রি। এমন কথাই জানালেন হায়দার আলী। তিনি রংপুরের পীরগাছা রেলস্টেশনে বসে বই বিক্রি করেন।
এর আগে হায়দার আলী ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বই বিক্রি করতেন। এ বয়সে এসে বিশ্রাম নেয়ার কথা থাকলেও তিনি বইয়ের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার ৬ মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার ছেলেমেয়েরা তাকে দেখাশোনা করেন কিনা, এ বিষয়ে তার কোন আক্ষেপ নেই। ছয় বছর আগে তার স্ত্রী মারা যায়। একাকীত্ব জীবনযাপন করছেন তিনি।
শতবর্ষী হায়দার আলীর বাড়ি উপজেলার কদমতলায়। তিনি এখনও চশমা ছাড়াই বই পড়ে
থাকেন। তার বই পড়তে বা কাউকে চিনতে কোন চশমা লাগে না। বই পড়া বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রতিদিনি বই পড়ি। বই পড়া আমার ভালো লাগে। বইয়ের ব্যবসা ভালো নয়। আগের মতো বই বিক্রি হয় না। এখন আর কেউ বই কিনতে চায় না। তাই অনেক দিনের বইয়ের ব্যবসাটি ছেড়ে দেব। এ বয়সে আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।
এখন দিনে ১৫০-২০০টাকার বই বিক্রি হয়, তা আবার প্রতিদিন নয়। তিনি স্বাধীনতার আগে থেকে বইয়ের ব্যবসা করেন। তিনি আইয়ুব সরকারের ২৪ বছর শাসনামলের কথা অকপটে বললেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুকেও ভোট দিয়েছেন বলে জানান তিনি। বয়সের ভারে কিছুটা নুয়ে পড়লেও কখনো মনোবল হারাননি তিনি। যে বয়সে অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন, সেখানে হায়দার আলী নিজ কর্মকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যে কোন সময় হায়দার আলী এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, কিন্তু রয়ে যাবে তার কর্মময় জীবন। নিজ কর্ম করে বেচে থাকাটা একটা আনন্দ, হয়তো তিনি বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন আমাদের সবাইকে।