মহাসড়কে বাস আছে, যাত্রী নেই

মোক্তার হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মে ১৩, ২০২১, ০৩:৩৪ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

গাজীপুরঃ গত কয়েকদিন গ্রামের বাড়ি ফিরতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল মহাসড়ক ও বাস ষ্টেশনগুলোতে।

আজ বৃহস্পতিবারের চিত্র একেবারেই আলাদা। ঈদের আগের দিন ঘরে ফেরা মানুষের তেমন ভিড় চোখে পড়েনি, যা রীতিমতো অবাক করার মতো। দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন বাস ষ্টেশন ঘুরে যাত্রীদের কোনো ভীড় দেখা যায়নি। আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মে) পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আগের দিন অন্যান্য বছর ঢাকা-ময়মনসিংহ ও গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট থাকলেও এ বছর ভিন্ন চিত্র। দুটি মহাসড়ক অনেকটাই ফাঁকা।

উত্তরবঙ্গের প্রবেশ পথ গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্র ত্রিমোড়ে বৃহস্পতিবার (১৩ মে) ঘরমুখো যাত্রীর ভিড় নেই। অথচ আগের দিন বুধবার গাড়ি না পেয়ে অনেক যাত্রীকে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিতে দেখা গেছে। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেল না থাকলেও আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস রয়েছে চোখে পড়ার মতো।

বেলা ১১টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চন্দ্রা একেবারে যাত্রীশূন্য। তবে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে দূরপাল্লার অনেক বাসকে সেখানে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এতে হতাশ গাড়ির চালকরা। কিছু কিছু বাস আবার খালি ফিরে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণরোধে সরকার দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। তবে এরপরও অনেক বাস চলাচল করছে।

সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুক জানান, আজ যাত্রীর চাপ নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ মানুষ গত রাতের মধ্যে চন্দ্রা ছেড়ে গেছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর জেলা হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে।

এ দুটি মহাসড়কের টঙ্গী, চেরাগআলী, বোর্ড বাজার, সাইনবোর্ড, চান্দনা চৌরাস্তা, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন এলাকার কোথাও যানজট দেখা যায়নি। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। যদিও আগের দিন বুধবার (১২ মে) পর্যন্ত টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজটের ছিল। আজ একবোরেই ভিন্ন চিত্র। সড়ক একবারেই ফাঁকা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুরে বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় নেত্রকোনা দুর্গাপুরের রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি এখানে স্থানীয় একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত তিন মাস যাবত বাড়ি যাইনি। আশা করছি মা-বাবা, ভাই-বোনদের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যাব। তবে গত কয়েকদিন ধরে মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স ও পিকআপে যে পরিমাণ বেশি ভাড়ার থাকার কারনে যাইনি। এখন আজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এসে দেখি সড়কে গাড়ী থাকলেও যাত্রী নেই।

চান্দনা চৌরাস্তায় কথা হয় ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়াগামী আলম এশিয়া পরিবহনের চালক আব্দুল জলিলের সাথে। তিনি বলেনদূরপাল্লার বাস চলছে শুনে বাস নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু সড়কে যাত্রী না পেয়ে তিনি হতাশ। এমন যাত্রীশূন্য অবস্থা হবে জানলে বের হতাম না। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্ট্যান্ডে গাড়ি নিয়ে বসে আছি। মাত্র ১০/১২ জন যাত্রী পেয়েছি। আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করে যাত্রী না পেলেও যাদেরকে পেয়েফি তাদেরকে নিয়েই রওনা হবো।

এদিকে, যাত্রী কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন বাস চালক ও যাত্রীরা। টঙ্গী থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন পোশাক কারখানার শ্রমিক সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। যখন জানতে পারলাম আজ বৃহস্পতিবার ঈদ হচ্ছে না, তাই চিন্তা করলাম আগামীকাল (বৃহস্পতিবার ১৩ মে) বাসে ভীর ও রাস্তায় যানজট কম থাকবে। কিন্তু, যাত্রী কম থাকার কারনে গাড়ী ছাড়তেছেনা। নাটোরগামী সুপার এন্টারপ্রাইজে ৭/৮ জন যাত্রী বসে আছে ঘণ্টাখানেক। বাসে বলে থাকা কুলসুম বলেন, ভোর ৬টায় এসেছেন। এখন পর্যন্ত বাস ছাড়ছে না।

দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরের মাওনা উড়াল সেতুর নিচে কথা হয় স্থানীয় হ্যামস পোশাক কারাখানার ফিনিশিং শাখার আজিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, সকাল ১০ টায় বের হয়ে এখনো ১ টা পর্যন্ত কোনো গাড়ী পাচ্ছি না। পাওয়া গেলেও ভাড়া বেশি চাচ্ছে এবং গাজীপুর থেকেই সিট ফিলাপ করে আসে। ঈদের আগের দিন এমন অবস্থায় পড়তে হবে বুঝতে পারিনি।

দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল সম্পর্কে গাজীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান উদ্দিন সরকার জানান, কেউ লুকোচুরি করে বিচ্ছিন্নভাবে দূরপাল্লার বাস চালালেও তা আমার নলেজে নেই। আমরা সরকারি সিদ্ধান্তে মেনে চলছি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামলা হোসেন জানান, গতকাল বুধবার পর্যন্ত মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। অনেকেই মনে করেছে আজ (বৃহস্পতিবার) ঈদ হয়ে যাবে। তাই, গ্রামের বাড়ী চলে গেছে তারা। ঢাকার দিক থেকে যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাস আসছে। থামাতে গেলেই যানজট বেড়ে যায়। তাই এখন আর দূরপাল্লার গাড়ি আটকাচ্ছি না। মহাসড়কে যাতে জটলা না বাধে সেজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।