মোজাম্মেল সর্দারের ডায়াবেটিসের ওষুধ দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও

জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি মে ১, ২০২১, ০১:৫৭ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

নীলফামারীঃ ডায়াবেটিসের ওষুধের উদ্ভাবক মোজাম্মেল সর্দার ওরফে মোজাম সর্দার। তবে ডায়াবেটিসের ওষুধ বিক্রেতা হিসেবে সমধিক পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।

নীলফামারীর সর্ব উত্তরের সীমান্ত ঘেষা উপজেলা ডিমলা। এই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামের সর্দারপাড়ায় তার পৈত্রিক নিবাস। নিজে বাসা করেছেন ডিমলা সদরের বাবুরহাটের জমদ্দির চৌপতি (আলম ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন) এলাকায়।

কমপক্ষে ১২ বিঘা জমি নিয়ে তার বসতবাড়ি। বাড়ির চারদিকে ফলদ ও ওষুধি গাছের সমাহার। সেই বাড়ির বাগানের উঠান ঘরে বসে আলাপ হয় তার সাথে এই প্রতিনিধির। তিনি এক সময় পাথরের ব্যবসা করতেন। ছিলো তার গরু ও কোয়েল পাখির খামার। সেগুলো এখন নেই। বর্তমানে তার ধ্যান জ্ঞান সবকিছুই ডায়াবেটিসের ওষুধ নিয়ে। তিনি পুরোপুরি একজন স্বশিক্ষিত মানুষ। গাছের পাতা, শিকড় ও ছাল নিয়ে তার মূল কাজ। ওষুধ বানানোর প্রাতিষ্ঠানিক নেই কোন তার বিদ্যা। যা কিছু শিখেছেন তার সবটুকুই হাতে কলমে। কিভাবে তিনি ডায়াবেটিসের ওষুধ বানানো শিখলেন সেই কথা তার মুখ থেকেই শোনা যাক।

তিনি আগামী নিউজকে বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগের ঘটনা। টগবগে তরুণ তিনি। বাবার একমাত্র সন্তান। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ডায়াবেটিস ও যৌন রোগসহ নানাবিধ রোগে তিনি সে সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসা নিতে শুরু করলেন এ্যালোপ্যাথিক, হোমিও ও কবিরাজি। কোন ধরনের ওষুধ তার শরীরে সুট করছিলো না। সাংসারিক জীবনেও নেমে আসে কলহ। এ সময় তিনি ছন্যছাড়া জীবন শুরু করলেন। সারাদিন গাছের নার্সারিতে ঘুরে ঘুরে বেড়ান। কবিরাজদের জিজ্ঞাসা করেন কোন গাছের পাতা শিকড় কি কাজ করে।

এসব কথা শুনেন আর সারাদিন ওইসব গাছের পাতা শিকড় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং নিজেও সেবন করতে থাকেন। এমন করতে করতে মিলে যায় তার দিশা। কোন কোন গাছের শিকড় ছাল ও পাতা তার রোগ নিরাময়ে কাজে আসছে তা নোটবুকে টুকে রাখেন। নিজে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর ওষুধ বানানোর কাজে হাত দেন। এর মধ্যে ২/৪ জন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগি তার কাছে এসে ওষুধ নিতে শুরু করেন। তারাও পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। এরপর তার নাম ডাক ধীরে ধীরে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে যায়। উপজেলার সকল মানুষের কাছে তার ওষুধের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর আন্তঃজেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য তার বাড়িতে আসে। তার ব্যক্তিগত ব্যবহৃত ০১৭৪৪৬৪০২৭৪ ও ০১৭১৩৭১৩৪০৪ নম্বরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ওষুধের অর্ডার দেয়। অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে পৌছে রোগের বর্ণনা দিয়ে ওষুধ নিয়ে যায়। বর্তমানে প্রবাসীরাও বিভিন্ন মাধ্যমে মোজাম সর্দারের তৈরি ডায়াবেটিসের ওষুধ নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন।

তিনি তার ওষুধের মূল উপাদান সংগ্রহ করেন বন জঙ্গল থেকে। বন জঙ্গল থেকে গাছ গাছড়া তুলে এনে বাড়িতে চূর্ণ করে প্রক্রিয়াজাত করেন। ডায়াবেটিসের ওষুধের সঙ্গে এখন গ্যাস ও যৌন রোগের চিকিৎসা সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। গাছ গাছড়ার শিকড় ছাল ও পাতাসহ আরো কিছু তার ওষুধের উপাদান আছে। এসব উপাদান হলো থৈকোর, কিসমিস, আঙ্গুর ফল, কাটবাদাম, কাজুবাদাম, আকড়গোড়া, অশ্বগন্ধা, আমলকি, হরতকি, বয়েরা, কালোজিরা, মেথি, ইসবগুলের ভূষিসহ ৩০ প্রকার গাছের শিকড় পাতা ও ছাল তিনি ওষুধের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেন।

তার ওষুধ সেবন করলে ডায়াবেটিকস, গ্যাস, যৌন রোগ, সর্দিকাশি নিরাময়সহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচুর বৃদ্ধি করে। এক কথায় দুর্ঘটনা ছাড়া কোন মানুষ তার ওষুধ সেবন করে কোন ভাবেই রোগাক্রান্ত হবে না। তবে তার সমস্ত ওষুধই চুর্ণ করা। প্রতিজন রোগির কোর্স কমপ্লিট করতে কমপক্ষে ৩ মাস সময় লাগে। প্রতিকোর্স ওষুধের মূল্য ১৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যক্তিগত জীবনে মোজাম্মেল সর্দার ওরফে মোজাম সর্দার ৬ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। ইতোমধ্যে ৩ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখনও ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে অধ্যায়ন করছে। বর্তমান বয়স তার ৫৪ বছর। জীবিত রয়েছে স্ত্রীও।

আগামীনিউজ/এএস