গড়াই নদীতে পানি নেই, জেলে পল্লীতে হাহাকার

হুমায়ুন কবির, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি এপ্রিল ২৮, ২০২১, ০৪:০৪ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

কুষ্টিয়া: একদিকে মহামারী করোনা অন্যদিকে গড়াই নদীতে নেই পানি। এ কারণে কুষ্টিয়ার খোকসার প্রায় শতাধিক জেলে পল্লীর মানুষগুলো দিন কাটাচ্ছেন বাধ্যহয়ে অনাহারে। মহা দুশ্চিন্তায় গড়াই পাড়ের জেলেরা। গড়াই পাড়ের কমলাপুর মিয়াপাড়া ও কালিবাড়ি পাড়ার জেলে পল্লীতে অধিকাংশ জেলেরাই জীবন-জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। চিরচেনা জেলে পল্লীর জেলেদের ব্যবহৃত নৌকা আর জাল গুলো এখন বাড়ির চালায় আর ধুধু বালুচরে শোভা পাচ্ছে। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে এই সব জেলে পরিবারের।

উপজেলার মৎস্য অফিসের সূত্র জানা যায়, উপজেলায় মোট ৭৩৫ জন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে কার্ডধারী ৫৩৭ জন ও কার্ড নেই  ১৯৮ জন জেলের। এ ছাড়া পৌরসভা এলাকায় জেলে রয়েছে ৭৮ জন এর মধ্যে কার্ডধারী রয়েছেন ৬৪ জন জেলে।

বুধবার দুপুরে গড়াই নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা কালীবাড়ি জেলে পল্লী সরজমিনে গিয়েই চোখে পড়ে কর্মহীন জেলেদের নৌকা এবং জাল গুলো অলস পড়ে থাকা বীভৎস অবস্থায় রয়েছে। সংসারের টানাপোড়েন জেলে পল্লীর গৃহীনিরা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, গবাদি পশু পালন করে কোনো মত জীবন যাপন করছে। 

কালীবাড়ি জেলে পল্লীতে সরজমিনে গিয়ে কথা হয় জেলে শ্যামল হাওলাদারের সাথে ডুকরে কেঁদে এই প্রতিবেদকে বলেন, নিজেদের জীবনের তাগিদে বাপ-দাদার পেশা এখনো ছাড়তে পারিনি। গড়াই নদীতে মাছ ধরে আমার সংসার চলে, এখন নদীতে জল নাই। ফলে মাছ ধরতে পারিনা। তাই আমাদের অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন চলছে। শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদীর ধুঁ-ধুঁ বালির মাঝে পড়ে আছে মাছ ধরা ডিঙ্গি নৌকা আর বাড়ির আঙ্গীনায় ঝুলছে কষ্টের মাছধরা জাল। 

তিনি আরো বলেন, বছরের চার মাস গড়াই নদীতে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করলেও বাকী আট মাস বেকার বসে থাকতে হয় জেলে পল্লীর জেলেদের। তারপরেও এখন নদীতে নেই পানি ও জল । পাচ্ছি না কোনো সাহায্য সহযোগীতা। পরিবার নিয়ে মানবতার জীবন কাটাচ্ছি আমরা। 

পৌর বাজারে সরজমিনে গিয়ে কমলাপুর মিয়াপাড়ার জেলে পাচু বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কমলাপুর মিয়াপাড়া ও কালীবাড়ি পাড়ায় প্রায় শতাধিক জেলেরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নদী থেকে মাছ আহরণ করে বাজারে বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। এর মধ্যে অনেকে আবার বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করে কেউ বা গড়াই নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের বাঁধ নির্মানে দিনমজুরির কাজ করে জীবন চালাচ্ছে । আবার কেও মহাজনের আড়তের মাছ কিনে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। 

উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদ হাসান বলেন, তাদের দুরাবস্থার কথা জেলা অফিসের কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবো।  সরকারি কোন অনুদান ও সহায়তার বরাদ্দ আসলে অবশ্যই তাদেরকে পৌঁছে দেওয়া হবে।

আগামীনিউজ/নাহিদ