জান্নাতকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল সেই রিকশাচালক বাবা

শরিফুল ইসলাম, রংপুর জেলা প্রতিনিধি এপ্রিল ২৫, ২০২১, ১০:০০ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

রংপুর: জেলায় নয়দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর শিশু জান্নাতকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ঠাকুরগাঁও থেকে আসা রিকশাচালক বাবা তারেক ইসলাম। বাড়ি ফেরার সময় তার অসুস্থ্ শিশু সন্তানের চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়ানো সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান পরিবারটি।

রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় ঠাকুরগাঁও থেকে নয় ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে আসা রিকশাটিও পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যান তারেক।

এরআগে সকাল এগারোটার দিকে হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাহফুজুল হক ওই শিশুটির সুস্থ্যতার ছাড় দেওয়ার বিষয়টি  নিশ্চিত করেন।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় শিশু জান্নাতের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর শিশু জান্নাতকে সাতদিন হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। পেটের মধ্যে নাড়ি পেঁচিয়ে যাওয়ায় শিশুটি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ নয়দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ শিশু জান্নাতকে বাড়ি ফেরার আগে রিকশাচালক বাবা তারেক ইসলাম  আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। শূন্য হাতে বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। আমার বাচ্চার অপারেশন করাতে এক টাকা খরচ করতে হয়নি। এখন বাচ্চা সুস্থ হয়েছে। বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।  আমার বাচ্চাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করার পর দেশ-বিদেশ থেকে যত টাকা অনুদান পেয়েছি, বাচ্চার ভবিষ্যতের জন্য সেই টাকা দিয়ে জমিজমা কিনেছি।

সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে আমার কষ্ট করে হাসপাতালে আসার সংবাদ  পরে আরও অনেক সাংবাদিক এসে সংবাদ করেছে। আমার কষ্টকে মিডিয়ায় প্রচার করায় স্বপ্ন নামের সুপারশপ প্রতিষ্ঠানটি আমার অসুস্থ শিশুর চিকিৎসাসেবার জন্য যাবতীয় ব্যয়ভার করেছে। এছাড়া রংপুুুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উই ফর দেমসহ বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক অনুদান পেয়েছি। অথচ যখন ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুুুরের উদ্দেশে রওনা করেছিলাম, তখন আমার কাছে একশ টাকাও ছিল না।

জান্নাতের মা সুলতানা  বলেন, আলহামদুল্লিাহ এখন খুব ভালো লাগছে। আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে। সবার সহযোগিতা না পেলে হয়তো অপারেশন করতে পারতাম না। সবাই এগিয়ে এসেছে বলেই সম্ভব হয়েছে। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন, যাতে ওর ভবিষ্যত সুন্দর হয়।

গত ১৩ এপ্রিল রাতে শিশু জান্নাতকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা চলা অবস্থায় পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে তিনদিন পর শনিবার রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে রংপুরে আসেন তারেক।

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক তারেক ইসলাম ও স্ত্রী সুলতানা বেগমের অভাব-অনটনের সংসার। রোজগারের একমাত্র সম্বল একটি চার্জার রিকশা। তারেক ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের রামবাবুর গোডাউন এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে। তার নয় ও তিন বছর বয়সী আরও দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে।

আগামীনিউজ/নাহিদ