মাগুরাঃ গত ৫০ দিনে ৪৮ হাজার ৪৪৫ জন নারী পুরুষ করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ সম্পন্ন করেছেন। প্রথম ডোজ সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৭ হাজার ৫২১ জন নারী পুরুষ।
মাগুরায় দুই দফায় ৭৬ হাজার ৫৫০ ডোজ ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে ৫৪ হাজার ৯০৭ জন নারী পুরুষ। স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এখনো পর্যন্ত ১ হাজার ১৪৯ ভায়াল ভ্যাকসিন সংরক্ষিত আছে। যা দিয়ে ১১ হাজার ৪৯০ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।
মাগুরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ রবিবার দুপুরে কোভিড-১৯ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম, জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বিষয়ক ভার্চুয়াল সভায় এ তথ্য দিয়েছেন মাগুরার সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিকল্পনা পরিষদের সদস্য নাসিমা বেগম। সংযুক্ত ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী রওশন আরা।
সমন্বয় করেন মাগুরা জেলা প্রশাসক ডক্টর আশরাফুল আলম। সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফ্জ্জুামান শিখর, মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুন্ডু, পুলিশ সুপার জাহিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাসির বাবলু, পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ানসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ।
সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান জানান, কোভিড-১৯ করোনা পরীক্ষার জন্যে এ পর্যন্ত মাগুরায় ৭ হাজার ১৮৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭ হাজার ১৬০ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত রিপোর্টে ১২০০ জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ২২জন। বর্তমানে ৭৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার মধ্যে ৬৭ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে বাকি ১২ জন মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা সুস্থ্য হয়েছেন। মাগুরায় করোনা সনাক্তের হার ১৬ শতাংশ। সিভিল সার্জন আরো জানান, মাগুরা সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্যে ৫০টি পৃথক শয্যার ব্যবস্থা আছে। ১২৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন নেজলের মাধ্যমে ১৫০ জন রোগী একসঙ্গে অক্সিজেন নিতে পারবেন এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া ১০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুজ্জামান জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি পৌরসভাসহ ৩৬টি ইউনিয়নে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ৮ হাজার ৫৫০ টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা থেকে অসহায় দরিদ্র কর্মহীন মানুষকে মাথাপিছু ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা খাদ্য সামগ্রী দেয়া হবে। এছাড়া মাগুরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৪ হাজার ৬২১ জন কর্মহীন ও হতদরিদ্রের জন্য ২০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪৭৯ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার বন্টন কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে।
সভায় মাগুরা পুলিশ সুপার জাহিরুল ইসলাম জানান, গত মার্চ মাসে মাগুরায় ৪টি খুনসহ ১০৫টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি জেলার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বলেন,‘সম্মিলিত সহযোগিতায় মাগুরায় করোনার প্রথম দফার চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। সে সময় আমাদের ঘোষণা ছিল জেলার একটি মানুষ অনাহারে থাকবে না।
আমরা সে অনুযায়ী হটলাইন সার্ভিস ও জেলার দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের মাধমে করোনায় কর্মহীন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আশা করছি। সে জন্যে স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারি সব ধরণের বিধিনিষেধ সবাইকে মেনে চলতে হবে’।
তিনি তার বক্তব্যে মাগুরা সদর হাসপাতালে অজ্ঞান ডাক্তারসহ চিকিৎসকের যে সংকট রয়েছে তা পূরণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একইসাথে করোনা পরিস্থিতিতে সদর হাসপাতাল থেকে আকস্মিকভাবে কোন চিকিৎসককে যেন বদলী করা না হয় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আগামীনিউজ/এএস