বিয়ের চাপেই নার্সকে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা!

নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৯, ২০২১, ০২:৫০ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

রাজশাহী: বিয়ের চাপ দেয়ায় রাজশাহীতে এক নার্সকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার চেষ্টা করেছে প্রধান অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য। প্রযুক্তির সহায়তায় ওই পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুুপরে তাদেরকে হত্যা মামলায় আদালতে তোলা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।  

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩), নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন আদারীপাড়া এলাকার ওষুধের দোকানি কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানাধীন শ্রীরামপুর এলাকার চটপটি বিক্রেতা
সুমন আলী (৩৪) এবং বিলশিমলা এলাকার মাইক্রোবাস চালক আব্দুর রহমান (২৫)। 

এদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার সাত বছর ধরে রেল পুলিশে (জিআরপি থানা) কর্মরত। তার বাড়ি পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রামে। 

এর আগে তিনি আরএমপির গোয়েন্দা বিভাগে ছিলেন নিমাই। সেখানে থাকাকালীন তিনি নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরখাস্ত হয়েও পরে চাকরি ফিরে পান। বাকি তিন আসামির দুজন তার বন্ধু।

চতুর্থ আসামি আব্দুর রহমান মাইক্রোবাস ড্রাইভার। তিনি হিন্দু থেকে মুসলমান হন। 

আর নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম ননিকা রাণী রায় (২৪)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর এলাকার নিপেন চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। ননিকা রাজশাহী নার্সিং কলেজ থেকে মিডওয়াইফারি কোর্সে সদ্য অধ্যয়ন সমাপ্ত করে রাঙ্গামাটিতে একটি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। এ বছর পিএসসি পরীক্ষাতে অংশ নেয়ার জন্য রাজশাহীতে আসেন। তিনি গত ৪ এপ্রিল নগরীর পাঠানপাড়া এলাকার শহীদ আব্দুস সাত্তার ছাত্রীনিবাসে ওঠেন।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ননিকার সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই ট্রেনে যাতায়াতের সময় শুভ পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ৬-৭ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর গত ৬ এপ্রিল স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন তিনি। তবে তার পূর্বের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ননিকা বিষয়টি জানতে পেরে নিমাইকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এতে নিমাই তার কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় প্রেমিকাকে হত্যা করে প্রথমে আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, পরে মরদেহ গুম করার চেষ্টা করেন। 

পিবিআই জানায়, বুধবার (১৪ এপ্রিল) গভীর রাতে ভাড়া বাড়িতে ননিকাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন নিমাই। পরে সিদ্ধাস্ত পরিবর্তন করে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মরদেহ গুম করার জন্য নগরীর বন্দর গেট এলাকা থেকে ১২০০ টাকা দিয়ে একটি ড্রাম কিনেন তিনি। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে দুই হাজার টাকায় একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে মরদেহটি নগরীর সিটি হাট এলাকার একটি ব্রিজের নিচে ফেলে দেন তারা। 

পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা পিবিআইয়ের একটি টিম ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় মাইক্রোবাসটি। আর ময়নাতদন্ত শেষে নিহত নার্সের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

তবে সোমবার দুপুরে আসামিদেরকে পুলিশের গাড়িতে ওঠানোর সময় মামলার চতুর্থ আসামি আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আল্লাহকে বিশ্বাস করে আমি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি। খুন-গুমের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। নিমাই ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপারেশনে যাওয়ার কথা বলে আমার গাড়ি ঠিক করে এবং দুই হাজার টাকা ভাড়ায় আমি তাদের সাথে যাই। ভাড়া মেরে চলে আসি। 

আসার সময় নিমাই আমাকে চা পান করায় এবং বখসিস হিসেবে আরো দুই হাজার টাকা দেয়। এসবের কিছুই আমি জানতাম না।” 

এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে পিবিআই রাজশাহীর এএসপি আবুল কালাম আযাদ সাংবাদিকদের জানান, নিমাই চন্দ্র সরকার হত্যার কথা স্বীকার করেছে। সে পুলিশ সদস্য হলেও তাকে অপরাধী হিসেবেই ধরা হয় এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত বিয়ের চাপেই ওই নার্সকে হত্যা করা হয়েছে। 

এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার এত দ্রুত উদঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নেয়া পিবিআইয়ের আরো একটি সফলতা বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) নগরীর বাইপাস সড়কের সিটি হাট সংলগ্ন একটি ডোবায় ড্রামের ভেতর মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং মরদেহ উদ্ধার করে সেটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এ সময় সময় ডিবি, পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পৃথকভাবে তারাও তদন্ত শুরু করেন।

আগামীনিউজ/নাহিদ