রূপগঞ্জঃ করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন লাশ। করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চখ্যাত রূপগঞ্জ উপজেলায় লকডাউন চলছে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে। হাট বাজার, পাড়ামহল্লার চায়ের দোকান, কাচাঁবাজার ও রাস্তায় সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
তবে বেশিরভাগ মানুষকেই মানতে দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি। কারো মাস্ক থুতনিকে। কারো বা কানে পেচানো। কারো আবার মাস্কই নেই। লকডাউনে উপজেলার কোথায়ও বাস চলাচল না করলেও গণপরিবহণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে লেগুনা, সিএনজি, ইজিবাইকসহ থ্রি হুইলার যানবাহন। এসকল যানবাহন গুলোতে মানা হচ্ছে না কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি। গাদাগাদি করে যানবাহন গুলোতে চড়ে বসছে যাত্রীরা।
এসকল যানবাহনে কাউকে নিজ গন্তব্যে যেতে হলে তিনগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। গত দুই দিন উপজেলার ভুলতা, রূপসী ও কাঞ্চন, মুাড়পাড়াসহ বেশকয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। সর্বশেষ উপজেলায় একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ২১৬৫ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ভুলতা, রূপসী ও কাঞ্চন, বরপা, মুড়াপাড়াসহ এলাকা গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা কওে মাস্ক না পড়েই কারণে অকারণে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে মানুষ। এছাড়া কাচাঁবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দোকান গুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ। কাচাঁবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যে দোকান গুলো থেকে পন্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতা বিক্রেতা কারো মাঝেই তেমন সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি। হাঁট বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে দেখা গেছে। তবে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনলে রাস্তাঘাট ফাকা হয়ে যায় আবার চলে গেলেই যেই সেই অবস্থা। এদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে, রূপসী কাঞ্চন সড়ক, কর্ণগোপ-মাসাবো উপজেলা বিভিন্ন সড়ক গুলোতে লেগুনা ও থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
এ সকল যানবাহন গুলোতে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এখানে নেই স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই। কথা হয় পূবেরগাঁও এলাকা রাজু মিয়ার সঙ্গে জানান, ব্যাক্তিগত জরুরী প্রয়োজনে কাঞ্চন থেকে সিএনজিতে করে গাউছিয়া যাচ্ছিলেন। এ রাস্তায় নিয়মিত সিএনজি ভাড়া ২০ টাকা হলেও তাকে যেতে গুনতে হয়েছে ৬০ টাকা। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএনজি চালককে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তার সোজাসাপ্টা উত্তর, লকডাউনে গাড়ি চালাইতে অইলে অনেকরে দিয়া চালাইতে অয় হের লাইগাই ভাড়া বেশি নিতাছি। এইসময় রিস্ক লইয়া গাড়ি চালাইতে অয়। ম্যাজিস্ট্রেট দেখলে জরিমানা করবো হেই ডর তো আছে অই। কথা হয় কাঞ্চন এলাকার বাসিন্দা রানা মিয়ার সাথে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গাউছিয়ার ভাড়া নিয়মিত ভাড়া ৪০ টাকা। লকডাউনের কারণে সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১’শ টাকা। সিএনজি ও ইজিবাইক চালকরা সাধারণ মানুষকে জিম্মী অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রূপগঞ্জ উপজেলায় সংক্রমণ বেড়েই চলছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে স্বাস্থ্যবিধি মানা খুব বেশি জরুরী। সরকার নির্ধারিত লকডাউন মেনে অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। কাচঁপুর হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ এসকল যানবাহন চলছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। থ্রি হুইলার মহাসড়কে এমনিতেই চলাচল নিষিদ্ধ। লকডাউনে থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ নিয়মিত চালকদের মামলা দেওয়া হচ্ছে।
গত বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৬০ টি মামলা দিয়েছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ্ নূসরাত জাহান বলেন, লকডাউন কঠোর করতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে। সচেতনতামূলক সংবাদ প্রকাশ কম করার জন্য সাংবাদিকদেরও দায়ী করেন পথচারীরা। তারা প্রশাসনকেও দায়ী করে বলেন ফুটপাত বসানোর সাথে নেতাসহ পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই জড়িত। সচেতনমহল বলেন ফাঁড়ির সামনে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে যত্রতত্র দোকানের পসরা সাজিয়ে বসিয়ে ব্যবসায়ীরা কিভাবে? । সামনে প্রশাসনের লোকজন থাকতে কি করে মহাসড়কের সিংহভাগ দখলে নেয় ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। আজ ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কারনেই এখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমছে। হাজার হাজার মানুষ জমে যাওয়ার কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে অনেকাংশ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভুলতা ও গোলাকান্দাইল এলাকায় তাঁত বাজার, আব্দুল হক, নূর ম্যানশন, এটুজেড সহ কয়েকটি মার্কেটের সামনে হাজার হাজার মানুষ।
আগামীনিউজ/জনী