ব্রাহ্মনবাড়িয়াঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলা শহরের ৩৮টি প্রতিষ্ঠান ও নিহত হয় ১২জন। এই তান্ডবকে উস্কিয়ে দেওয়া অভিযোগ রয়েছে ‘আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের এডমিনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। তবে পুলিশ জানায়, এই গ্রুপটির এডমিন আদনান হোসেন উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশ তাকে খোঁজে না পেলেও তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি সচল রয়েছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৬ মার্চ বিকেল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলস্টেশন সহ শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করে মাদরাসা ছাত্র ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ২৭মার্চ ও ২৮মার্চও চলে জেলা শহরে তান্ডব। ২৭মার্চ রাতে ‘আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামের ফেসবুকের এডমিন আদনান হোসেন উজ্জ্বল গ্রুপে উস্কানিমূলক পোস্ট করেন। তিনি লিখেন,’বুঝা যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৌহিদী জনতা গর্জে উঠেছে। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে আরও শক্ত করার তৌফিক দান করুক। ভয়কে নিয়ে নয় আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া আপিনাদের পাশে আছে সার্বক্ষণিক। এছাড়াও আরও একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ আপনারা যারা একটু ফ্রি আছেন, আপনাদের ফ্রেন্ডলিস্টের সকল মুসলিম ভাই ও বোনকে ইনভাইট করে গ্রুপের সাথে যুক্ত করুন….ইসলামের জিহাদের সাথে…বা প্রত্যেকটি আপডেট পেস্ট ফ্রেন্ডলিস্টের সকল ফ্রেন্ডদের মেনশন করুন’।
এই গ্রুপে এসএম সোহেল রানা নামের একজন তার পোস্টে লিখেন, ‘বি-বাড়িয়াতে অসংখ্য পুলিশ, বিজিবি ও এম্ব্যুলেন্স প্রবেশের তথ্য পাওয়া গেছে। যা বিশ্বযোগ্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন। অনেকে এমনও জানিয়েছে বিএসএফ প্রবেশ করেছে দলে দলে। ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে বি-বাড়িয়ায়। আশপাশের শহরের ভাইয়েরা বি-বাড়িয়ার দিকে যাওয়া আব্যশক হয়ে গেছে। সাহসী মানসিকতা তৈরির সময় এসে গেছে। ভিতু থাকলে এবার শুধু রক্তই ঝড়বে’।
এই ফেসবুক গ্রুপের কর্মকান্ডে জেলার অন্যান্য সামাজিক গ্রুপ গুলোও বিব্রত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সামাজিক সংগঠনের এডমিন জানায়, আমরা সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রুপ করেছি। বিভিন্ন সময়ে নিজেদের চাঁদার টাকা সাহায্য সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আলোকিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রুপ ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপগুলোর কর্মকান্ডকে প্রশ্নে সম্মুখীন করেছে। কোন সংগঠনের কাজ সমাজে অস্থিতিশীল করা নয়।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুজন দত্ত জানান, আমরা দেখছি আদনান হোসেন উজ্জ্বল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটিভ। কিন্তু তাকে কেন এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা বুঝে আসছে না। তার এই গ্রুপের অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহায়তা করে এসেছে। হয়তো তাদের ছত্রছায়ায় উজ্জ্বল লুকিয়ে আছে। আদনান হোসেন উজ্জ্বলের বিভিন্ন অপকর্মের প্রমাণ আমরা থানায় দিয়েছি, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের জানিয়েছি। তাকে গ্রেফতার করা নিয়ে চলছে বাউতাবাজী।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ফেসবুক পেইজ গুলো মনিটর আগেও করেছি, এখনো করছি। যারা সহিংসতায় উস্কানিদাতা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদনান হোসেন উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করতে ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। সে পলাতক আছে। ফেসবুকে অপপ্রচারকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
আগামীনিউজ/জনী