নিখোঁজ হওয়ার ১৬ বছর পর ছেলের লাশ পেল মা

মোহাম্মদ শাহ আলম, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি এপ্রিল ১৪, ২০২১, ১১:৪৬ এএম
ছবিঃ সংগৃহীত
হবিগঞ্জঃ প্রায় ১৬ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মৃত শামছুদ্দিনের ছেলে মোঃ ইমদাদুল হক ইমন (৩৫)। নিখোঁজের সময় তার বয়স ছিল (১৯)। অবশেষে দীর্ঘ ১৬ বছর পর তার সন্ধান পেলেন মা আয়েশা আক্তার। তাও আবার জীবিত নয়, মৃত অবস্থায়। পুলিশ তার মাকে লাশের সন্ধান দিলে আঁতকে উঠেন তিনি। নিখোজ হওয়া সন্তানকে
 
বছরের পর বছর খুঁজে ফিরছিলেন তার মা। এতগুলো বছর ধরে খুঁজতে-খুঁজতে ইমনকে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন তার মা। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর পুলিশ মোঃ ইমদাদুল হক ইমন (৩৫) নামে ওই ব্যক্তির মরদেহ শনাক্ত করেছে।
 
বুধবার সকাল ৯ টায় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ইমন প্রায় ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তার মা আয়েশা আক্তার ও ভাই জিয়াউল হক দেশজুড়ে ইমনকে খোঁজাখুজি করেছেন, কিন্তু সন্ধান পাননি। খুঁজতে-খুঁজতে আয়েশা আক্তার তার ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।
 
এদিকে, কয়েকদিন আগে রাজধানীর কাফরুল থানা পুলিশ একটি রক্তাক্ত মরদেহ পায় এবং মরদেহের সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তারা ইমনকে শনাক্ত করেন। পরে আজমিরীগঞ্জ থানায় ছবি পাঠালে ইমনের পরিবারের সদস্যরাও থানায় এসে মরদেহটি শনাক্ত করেন।
 
দীর্ঘ ১৬ বছর খুঁজে ফেরা ছেলের রক্তাক্ত মরদেহের খবর পাওয়ার পর ইমনের মা ভেঙে পড়েছেন। তিনি কান্নাকাটি করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় মরদেহ নিয়ে আসার খরচও তাদের ছিল না। খবর পেয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা টাকা দিয়ে সাহায্য করে ইমনের বড় ভাই জিয়াউল হক মরদেহটি ঢাকা থেকে বুধবার ভোরবেলা গ্রামের বাড়িতে এনে সকাল ৯ টার দিকে দাফন সম্পন্ন করেন।
 
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইমন ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। কাফরুল থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের হিমাগারে রেখেছে। জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী তারাই আজমিরীগঞ্জ থানায় খবর দিয়েছে।
 
ইমনের পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, তিনি প্রায় ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এতদিন পর রক্তাক্ত মরদেহ শনাক্তের খবর পাওয়ায় মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। বুধবার ভোরবেলা ইমনের মৃত্যু দেহ তার বাড়িতে এসে পৌঁছে । ইমনের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তিনি ঢাকার মিরপুরে পল্লবী আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন।
 
ইমনের সহপাঠী মো. আবু হেনা বলেন, ‘আমি ইমনের সঙ্গে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ইমনের বাবা মারা গেছেন আরও আগেই। এখন সংসারে মা, আরেক ভাই ও বোন রয়েছেন। ইমন প্রায় ১৬ বছর আগে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফেরেনি। এরপর তার মা ছেলেকে খুঁজে ফিরেছেন অনেক জায়গায়।
 
আগামীনিউজ/এএস