ঢাকাঃ জেলার উপকন্ঠ সাভারের হাসপাতাল থেকে রেস্তোরা, সেলুন থেকে বাস স্ট্যান্ড সেখানেই যাবেন চোখে পড়বে ছোট ছোট সেল্ফ আকারের বক্সের ভিতরে কিছু বই পরে আছে। সেই বইগুলো রাখা হয়েছে আপনার বিরিক্তর সময়কে কাজে লাগানোর জন্য।
এই ছোট ছোট লাইব্রেরী গুলো দেখে আপনার মনে হতেই পাড়ে এ যেন এক বইয়ের শহর। আর এই মহান কাজটি পিছনে রয়েছে একজন গণমাধ্যমাকর্মী। হ্যা, একাত্তর টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি আশরাফ সিজেল এর কথা বলা হচ্ছে। যিনি সাভারের এই শিল্পাঞ্চল শহরটিকে বইয়ের নগরীতে পরিণত করার পরিকল্পনা করেন।
সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বইপ্রেমীদের জন্য ‘বইয়ের পাতায় বন্ধু পাতি’এই শ্লোগানকে ধারণ করে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী যাত্রা করে ‘পথে পথে পাঠ’ নামের একটি ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন আশরাফ সিজেল। বর্তমানে ৮ টি মিনি লাইব্রেরী চালু আছে। ৫০টি মিনি লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ চলমান থাকলেও তা করোনার কারনে আপাতত বন্ধ রয়েছে।
ছোট ছোট এই পাঠাগারে শোভা পাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধার পক্ষের বই, বঙ্গবন্ধুর ও তাজ উদ্দিন আহমেদ এর আত্মজীবনী মূলক বই সহ দেশ-বিদেশের সাহিত্য ও ইতিহাসমূলক বই। এছাড়াও রয়েছে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ এর গল্প, কবিতার বইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রম্যরস ও শৈশব-কৈশোরের শিক্ষামূলক বই।
এ ব্যাপারে সাদিদ দিরা আল সাদ নামের এক নাট্য নির্মাতা তার ফেসবুকে লেখেছেন “আলো যেমন জাগতিক নিয়মে অন্ধকার দূর করে সব কিছু মূর্ত করে, তেমনি বই মানুষের মনের ভেতরে জ্ঞানের আলো এনে যাবতীয় অন্ধকারকে দূর করে চেতনার আলোকে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে দেখায়।
আলো শুধু ভৌগোলিক ভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে। আর বই অতীত থেকে ভবিষ্যৎ, নিকট থেকে দূরে, প্রান্ত থেকে অন্তে এমনকি যুগ থেকে যুগান্তরে জ্ঞানের আলোকে পৌঁছে দিতে পারে। তাই দেশ কালের সীমানা অতিক্রম করে জ্ঞানের আলোকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে একমাত্র বই। শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল আত্মশিখন। আর বই সেই আত্মশিখনের শ্রেষ্ঠ সহায়ক। বিনোদন থেকে শিক্ষা, অবসর যাপন থেকে নিঃসঙ্গতা দূর সবেতেই বই শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হতে পারে। আর এই বই নিয়ে এক বিশেষ মানুষের বিশেষ চিন্তা, শ্রদ্ধেয় আশরাফ সিজেল ভাইয়ের।...”
শাহ জালাল সুমন নামে ব্রাকের এক শিক্ষা কর্মকর্তা লিখেছেন, “আমি গত ৬ এপ্রিল ২০২১ তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাভারে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন নিতে গিয়ে দেখলাম 'পথে পথে পাঠ' বুক সেলফ। সেখানে সব বয়সী মানুষের জন্য রয়েছে বই পড়ার সুযোগ।অনেকে চিকিৎসা নিতে এসেও বেশ বই পড়ছে। এটা আমাকে অনেক টা ভাবিয়ে তুলল। সত্যিই প্রশংসনীয় যিনি ব্যতিক্রম উদ্যোগটি নিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিজেদের মেধা বিকশিত করার যে প্রচেষ্ঠা করেছেন তা সত্যিসত্যিই অনুভব করছি। আমিও খুব আগ্রহ সহকারে সেল্ফ থেকে বানী চিরন্তনী বই টি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম এবং ভালো লাগা কাজ করলো।...”
এ নিয়ে সব চেয়ে সুন্দর লেখা লিখেছেন তামীম আল-দারি খান রাআদ নামের এক ব্যাক্তি, তিনি লিখেছেন “কখনো কী ভেবেছেন একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনবেন, আপনার প্রিয় সাভার হয়ে গেছে ‘বইয়ের শহর’? রেস্তোরাঁ গুলোতে এখন আর অর্ডার দিয়ে খাবারের জন্য বিরক্তিকর সময় কাটাতে হয় না, সামনে রাখা আছে আপনার পছন্দের বইগুলো; সেলুনে লম্বা সিরিয়ালে মাছি মারার অবকাশ নেই, আপনি আছেন বইয়ে বুঁদ হয়ে; হাসপাতালের করিডোরে লম্বা সিরিয়ালের বিরক্তি কাটাতে পড়ছেন প্রিয় বিষয়ে লেখা বই। কেমন হবে? আপনার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের মহোৎসব শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে, প্রিয় আশরাফ সিজেল ভাই পথে পথে পাঠ এর সুন্দর ও সুপরিকল্পিত ধারণা নিয়ে এসেছেন আপনাদের জন্য, যেখানে সাভার-ধামরাই-আশুলিয়া দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ‘বইয়ের শহর’ হবার পথে।”
পথে পথে পাঠের প্রতিষ্ঠাতা গণমাধ্যমকর্মী আশরাফ সিজেল আগামী নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আসক্তি থেকে দূরে রাখতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানভিত্তিক উদ্বুদ্ধ করতে বইয়ের পাতায় বন্ধু পাততেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, যদি কোনো লেখক বা শুভাকাঙ্খী ‘পথে পথে পাঠে’ বই দিতে চান, তা সাদরে গ্রহন করা হবে। কিন্তু নগদ অর্থ, অনুদান কিংবা ত্রাণ গ্রহন করা হবে না।
সব মিলিয়ে বলতে পারি, সাহিত্য আর শিল্পের শহর বললে সবার আগে এখন সাভারের নাম আসবে। এ শহরের আনাচে-কানাচে সর্বত্র নানা ইতিহাস ছড়িয়ে আছে। সাহিত্য আর শিল্প ভালোবাসা মানুষরা একবার হলেও চেষ্টা করেন শহরটি থেকে ঘুরে আসতে।