কিশোরগঞ্জঃ জেলার পাকুন্দিয়ার সর্বত্র নকল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে চলছে বিড়ির রমরমা ব্যবসা। শুল্ক বিভাগের নিরবতায় প্রতিদিন বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রসিকিউশনের অভাবে উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছেনা, স্থানীয় প্রশাসনের মন্তব্য।
কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের নিকটবর্তী উপজেলা পাকুন্দিয়ায় চলছে নকল ব্যান্ডরোল (জাল ফটোষ্ট্যাট) লাগিয়ে বিড়ির ব্যবসা।
জানাগেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বাজার ও পৌর এলাকার বড় ছোট বিভিন্ন দোকানে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও দালাল জাল ফটোষ্টেট করা ব্যান্ডরোল লাগিয়ে বিড়ি বিক্রয় করে আসছে। অবৈধভাবে চালিয়ে আসা এ ব্যবসায় ¯থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেয়েই চলছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, পাকুন্দিয়ার বিভিন্ন বাজারে নতুন বিড়ি, আফিজ বিড়ি, কৃষক বিড়ি, আমিন বিড়ি- সরকারের শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে নিজেদের তৈরি করা ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে আসছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রতি প্যাকেট বিড়ির ট্যারিফ ১৮ এর মধ্যে সম্পুরক শুল্ক ৩০%, ভ্যাট ১৫%, মোট ৪৫% করভার, প্রতি প্যাকেটে ৯.০৯ টাকা ও প্রতি হাজার বিড়িতে ৩৬৩.৬০ টাকা শুল্ককর বাধ্যতামূলক থাকলেও অবৈধ বিড়ি উৎপাদকগোষ্ঠী তা না মেনে চোরাই পথ অবলম্বন করে চলছে।
প্রতি প্যাকেট বিড়ি শুল্কসহ উৎপাদন খরচ যেখানে ২০ টাকা বিক্রয়মূল্য হওয়ার কথা, সেখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও দোকানমালিক ব্যান্ডরোল বিহীন এসকল বিড়ি মাত্র ৮ টাকা হতে ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করে আসছে। এতে করে বৈধ উৎপাদক ও সরকারের নির্ধারিত ব্যান্ডরোল করশুল্ক ব্যবহার করে প্রতি প্যাকেট ২০ টাকা দরে বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। নকল ব্যান্ডরোল যুক্ত করে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নির্বিঘেœ এ কাজটি করে যাচ্ছে।
এ প্রতিনিধি সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন বাজারে মিলে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মির্জাপুর বাজারে নতুন বিড়ি বিক্রয়কারী অজিত সাহা, সুনীল সাহা, রতন সাহা, অপু সাহা, জীবন সাহা এবং আফিজ বিড়ি বিক্রয়কারী কবির মিয়ার নাম উঠে আসে। পাকুন্দিয়ার আরেক বাজার তারাকান্দীতে শিবলী সেলিম বাচ্চুমিয়া, জাংগালিয়া বাজারের রতন মিয়া, সেলিম মিয়া, সোহেল মিয়া রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নতুন বিড়ি বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।
পাকুন্দিয়ার ঈশাখারোড এলাকায় শাহীন আসাদ জিলানি, দরগাবাজার এলাকায় শামীম রবিমিয়া, গোলাপ মিয়া, মোস্তাকিম, ভ’ঞাবাজার এলাকায় দেলোয়ার, শিমুলিয়া কলাদিয়া এলাকায় বিল্লাল কৃষক বিড়ি ও সুখিয়া বাজারের উদয় সরকার আমিন বিড়ি বিক্রয় করে সরকারের বিপুল পরিমান কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন।
বিক্রেতাদের কাছে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ বিড়ি বিক্রির কারন জানতে চাইলে শর্তসাপেক্ষে তারা প্রতিবেদককে জানায়, অধিক লাভজনক বলে তারা এগুলো বিক্রয় করে। ব্যান্ডরোল গুলো সঠিক না অবৈধ সে সর্ম্পকে তারা জানে না, কিন্ত প্রশাসনের কেউ এটি নিষেধ করেনি বলে এগুলোর বৈধ-অবৈধতা নিয়ে বিক্রেতাদের কোনো ধারনা নেই।
কথা হয় পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম লুৎফুর রহমানের সাথে। তিনি প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ব্যান্ডরোল বা শুল্ক ট্যাক্স ব্যবহার না করে নকল বা জাল ব্যবহার দন্ডনীয় অপরাধ তবে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাস্টমস এন্ড ভ্যাট বিভাগের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। তারা মোবাইল কোর্ট প্রসিকিউশন করলে তবে এ চোরাকারবারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব।
অপরদিকে, কিশোরগঞ্জের কাস্টমস, এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট এর সহকারী কমিশনার(ভ্যাট) মনোয়ারা খাতুন এর নিকট রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, পণ্য উৎপাদনকারী, সেবাপ্রদানকারী ও অন্যান্য উৎস থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভ্যাট আদায় নিয়মিত হচ্ছে। দুটি সার্কেলে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ছয়জন সহঃ রাজস্ব কর্মকর্তা একাজে নিয়োজিত আছেন। কর্মক্ষেত্রে এ কর্মকর্তার নিয়মিত অনুপস্থিতির কারন জানতে চাইলে তিনি ঢাকা অফিসে বেশি সময় দেন। নেত্রকোনা জেলার সহকারী কমিশনার (ভ্যাট) এর দায়িত্বে থাকায় কিশোরগঞ্জ দপ্তরে তাকে পাওয়া যায়না বলে জানান।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভ্যাট) কে স্মারক নং- ০৫.৪১.৪৮০০.০১৩.০৯.০২৫.১৮.১১৯ তারিখঃ ২৮-০১-২০২১ পত্রে মোবাইল র্কোট পরিচালনার র্কাযক্রম গ্রহণের জন্য ও প্রসিকিউটর হিসেবে সহযোগীতা করার অনুরোধ জানালেও এ কর্মকর্তা অদ্যাবধি কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে জানা গেছে। ফলে অসাধু বিড়ি উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা এ সুযোগে সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব ঠকায়। বিষয়টিতে অতিদ্রুত রাজস্ব বিভাগের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
আগামীনিউজ/এএস