হাওরে ফসলরক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ‘পরিণত হয়েছে ব্যবসায়’

প্রভাত আহমেদ এপ্রিল ৩, ২০২১, ০১:২৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে একটি সংগঠন। তারা বলছে, সরকার ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে প্রতি বছর শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় অনেক স্থানে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে হাওরের প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। হাওরের বাঁধ নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (হ্যাপ) নামের একটি সংগঠন এসব কথা বলে। গত ২৫ মার্চ দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

এতে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান শরিফ। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হ্যাপের সদস্য স্বপন কুমার চন্দ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) পদ্ধতি সব মহলে সমাদৃত হয়েছে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন গণশুনানির মাধ্যমে হয় না। হাওরের প্রকৃত কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা। কিন্তু পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামে-বেনামে এসব পিআইসিতে রাজনৈতিক দলের লোক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঢুকে পড়ে। যে কারণে বাঁধের কাজে অনিয়ম ও বিলম্ব হয়। হ্যাপের সদস্যরা সুনামগঞ্জের তিনটি উপজেলায় বাঁধের কাজ ঘুরে দেখেছেন।

তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এবার বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের এক মাস পরে শুরু হয়েছে। এখনও কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। অসময়ে বাঁধের কাজ মানেই দুর্বল বাঁধ, আর দুর্বল বাঁধ পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাই সামলাতে পারবে না। অথচ কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। সংবাদ সম্মেলনে নদী খনন ও হাওরের ভিতরে থাকা ছোট ছোট খাল খননের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে বাঁধের ওপর চাপ কমবে। প্রতি বছর যেসব বাঁধে মাটি দেওয়া হয় সেগুলো বর্ষায় আবার হাওরে গিয়ে পড়ে। এতে হাওর ভরাট হচ্ছে। তাই শুধু বাঁধ উঁচু করে ফসলরক্ষা করা যাবে না। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ১১টি উপজেলার হাওরে ৮১০টি প্রকল্পে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ হচ্ছে।

এ জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। প্রতিটি প্রকল্পে কাজ করবে একটি পিআইসি। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। বাঁধের কাজের সময়মীসা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত ৮০১টি প্রকল্পে মাটির কাজ শেষ হয়েছে। ৩৬৪টি প্রকল্পে ঘাস লাগানো শেষ। অন্যগুলোতে কাজ চলছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেছেন, হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। নীতিমালা অনুযায়ীই সব প্রকল্পে কাজ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে তাতে স্বাভাবিক আগাম বন্যা এলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।

আগামীনিউজ/প্রভাত