পেকুয়ায় সেতুর পিলার নির্মাণেই ১৫ বছর...

নিজস্ব প্রতিনিধি এপ্রিল ১, ২০২১, ০৮:০০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নে নির্মাণাধীন দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৫ বছর আগে। সেখানে পিলার (স্তম্ভ) নির্মাণ করা হয়। শুধু পিলার নির্মাণ করেই ফেলে রাখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

দীর্ঘ ১৫ বছর পরও মূলসেতুর নির্মাণ কাজ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সেতু নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে বেশি টাকা উত্তোলন করে লাপাত্তা হয়ে গেছে। সেতু নির্মাণে কোটি টাকার কাজ এলাকার মানুষের কোন কাজে আসছে না। এতে পেকুয়া উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়া ও মহেশখালী মাতারবাড়ীর সঙ্গে পেকুয়ার মূল ভূখণ্ডের সংযোগ স্থাপন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। এলাকাবাসীর ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।

প্রত্যন্ত ও দুর্গম দ্বীপবাসীর খেয়া নৌকা করে পারাপারই একমাত্র ভরসা। স্থানীয়রা এই দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ নতুন করে শুরু করার দাবি জানিয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাশে সৈকতবাজার এলাকায় উজানটিয়া ও করিয়াদিয়ার মাঝখানে মাতামুহুরী নদীর বুকে নির্মাণ করা আটটি পিলার পানির উপরে উঁকি মারছে, কিন্তু সেতু নেই। পিলারের উপরের দিকে বেশ কিছু লোহার রড় দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়ে গেছে, নদীর লোনা পানিতে পিলারগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে।

এই নদীর এই শাখা দিয়ে চলাচল রত নৌকা সম্পানের ধাক্কায় কয়েকটি পিলার ইতোমধ্যে হেলে গেছে। ভাটির সময়ে পিলারগুলো উঁকি মারলেও জোয়ার সময়ে ডুব দেয়। পিলারগুলোর উপরিভাগে লোহার রড় বের হয়ে থাকায় নদীর এ রুটে নৌকা সাম্পান চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকাবাসী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নদীর চরের হাঁটু পরিমাণ কাদা মাড়িযে খেয়া নৌকা করে নদী পার হতে হচ্ছে। ভোগান্তির যেন কোনো শেষ নেই। এ নদীর সামান্য পশ্চিম পাশে উজানটিয়ার সঙ্গে মহেশখালী মাতারবাড়ির সংযোগ স্থাপনের জন্য নির্মাণাধীন আরও একটি সেতু অসমাপ্ত আছে। এই সেতুটিরও ১৫ বছর আগে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু এখনো সেতু নির্মিত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ২০০৬ সালের মে মাসে উজানটিয়া-করিয়ারদিয়া সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। একই সময়ে নির্মাণাধীন ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের উজানটিয়া-মাতারবাড়ি সংযোগ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

পেকুয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই দুইটি সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চকোরী কনস্ট্রাকশনের মালিক ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন নির্মাণাধীন সেতু দুইটি ৩০ ভাগ কাজও সম্পন্ন করতে পারেননি। অথচ এই দুই প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া বেশিরভাগ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন লাপাত্তা হয়ে গেছেন।

উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়ার চিংড়ি চাষী জিয়াবুল হক জিকু জানান, করিয়ারদিয়া পেকুয়া উপজেলা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। এই দ্বীপে লবণ চাষ ও চিংড়ি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ একটি এলাকা। মাতামুহুরী নদীর উজানটিয়া অংশে সেতু নির্মাণ দ্বীপবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি।

অপরদিকে উজানটিয়া-মাতারবাড়ীর নির্মিতব্য সংযোগ সেতুসহ দুইটি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে লবণ, চিংড়ি পরিবহন ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে এলাকার মানুষের ভোগান্তির অবসান হয়ে যেত। তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে নতুন করে ওই সেতু দুইটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল আলিম জানান, নির্মাণাধীন এই সেতু দুইটির অবস্থা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সেতুর জন্য নির্মাণ করা পিলারগুলোর উপরে আবার সেতু নির্মাণ করা যাবে কিনা অথবা আবার নতুন করে পিলার নির্মাণ করে সেতু নির্মাণ করতে হবে কিনা- তা যাচাই করার জন্য এলজিইডির ঢাকা অধিদপ্তর থেকে কয়েক মাস আগে প্রকৌশলীদের দুই টিম দুইবার এসে তদন্ত করে গেছে। এখনও কোনো রিপোর্ট আসেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশ দেবেন সেভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আগামীনিউজ/প্রভাত