ফরিদপুর: জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় সরকারী বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ঘর নির্মানে নিন্ম মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান ঘর প্রাপ্ত ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে সরেজমিনে গেলে ঘর পাওয়া ব্যক্তিরা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরের মালিক বৃদ্ধা ইয়াদালী বলেন, সরকারী ঘর নির্মাণ সকল খরচ সরকার বহন করবেন বলে আমরা জানতাম। কিন্তু ঠিকাদার মাসুদ গংরা আমাদের কাছ থেকে ঘর প্রতি বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। এমনকি মিস্ত্রীদের থাকা খাওয়া ও মালামাল বহনের খরচ পর্যন্ত আমাদের থেকে নিয়েছে। ঘরের টিনেরচাল তৈরীর সময় ঠিকাদার মাসুদ আমার কাছে দুই হাজার টাকা চেয়েছিল টাকা না দেওয়ায় কাঠ অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। আমার ঘর ঐভাবে ফাঁকা রয়েছে। তিনি আরো বলেন যে ঘর দিয়েছে তাতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
দুস্থ্ রাবেয়া বেগম বলেন, একখানা ঘর দিয়ে আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দিয়েছেন সরকার। কিন্তু আমার দলিল কৃত জমিতে সরকারের কাছে দলিল করে দিয়ে যে ঘর দিয়েছে সেই ঘরে বসবাস করার মত কোন উপায় নাই। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। কারণ উল্লেখ্য করে বলেন ঘর নির্মাণের সামগ্রী এতই নিন্ম মানের দিয়েছে যা কোন ঘর নির্মানে ব্যবহৃত হয় না। এখনই পিলার, জানালা ভেঙ্গে গেছে পিলারের পরিবর্তে বাস দিয়ে ঠেকনা দিয়ে রেখেছে। দরজা জানালা যে কটি দেয়ার প্রয়োজন তা দেননি।
প্রতিবন্ধি লাকি বেগমের মা হাসিনা বেগম জানান, আমার প্রতিবন্ধী অসহায় মেয়েকেও ওরা ছাড় দেয়নি ঘর নির্মানের জন্য তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় অত্যান্ত নিন্ম মানের ইট,বালি,সিমেন্ট দিয়ে ঘর করা হয়েছে। যার ফলে ঘরের পলেস্তরা খসে পড়ছে। হাত দিয়ে ধাক্কা দিলে গাতনি ছুটে যায়। চালের কাঠ গুলো এতই চিকন দেয়া হয়েছে যা লাকড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমরা খোরাকির টাকা,মালামাল বহনের টাকা ও ভরাট বালির টাকা দিয়েছে। তার পরেও ঘর ছোট করেছে।
ঘর নির্মাণের কাঠমিস্ত্রি মহির জানান, ঘরের কাঠ গুলো অত্যন্ত নিন্ম মানের কাঠ ব্যবহার হয়েছে। রাজ মিস্ত্রি রাজ্জাক বলেন, নিন্ম মানের মাল দিয়েই ঘরের কাজ হয়েছে। তবে ঠিকাদার মাসুদ আমাকে যে মাল দিয়েছে আমি তা দিয়েই কাজ করেছি। খাওয়ার খরচ ঘর মালিকরাই দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মাসুদ বলেন, আমি উপজেলা থেকে ২৫০ ঘরের মধ্যে ৭৭টি ঘরের কাজ পেয়েছি। প্রতি ঘরের নির্মানের জন্য রাজ মিস্ত্রি,কাঠ মিস্ত্রি ও রং মিস্ত্রি সহ সম্পন্ন করা বাবদ ৩৫ হাজার টাকায় চুক্তি নিয়েছি। ঘরের নির্মানের জন্য ৪ হাজার ইট,তিন’শ ফুট বালি ও ৩৫ ব্যাগ সিমেন্ট দিয়েছে উপজেলা অফিস। এর বেশী লাগলে ঘরপ্রাপ্তরা দিয়েছে।
এদিকে স্থানীয় তুজারপুর ইউপি চেয়ারম্যান পরিমল দাস বলেন,আমার ইউনিয়ন হওয়া সত্বেও কিসের ঘর কোথা থেকে আসছে কারা করেন এসব আমি কিছুই জানিনা।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, ভাঙ্গা উপজেলায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ২৫০ ঘর উপহার দিয়েছে। প্রতিটি ঘরে এক লক্ষ ৭১ হাজার টাকা করে বরাদ্দ। আমি কয়েকদিন যাবৎ এসেছি কে কি ভাবে করেছে আমি খবর নিয়ে যদি কোন অনিয়ম থাকে আমি দেখে সে সব ঘরের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এর মধ্যে অনেক ঘর আমরা সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি।
আগামীনিউজ/মালেক