পাবনা: জন্মের পর থেকেই দুজনের মাথা ছিলো জোড়া লাগানো। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে মেলেনি কোনো সমাধান। চিকিৎসা ছিলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। অবশেষে সিএমএইচ-এ দীর্ঘদিনের চিকিৎসা শেষে জোড়া মাথা আলাদা হয়ে সাড়ে তিন বছর পর বাড়িতে ফিরলো আলোচিত সেই রাবেয়া-রোকেয়া।
সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়িতে পৌঁছার পর তাদের ফুল বরণ করে নেয় স্বজন-প্রতিবেশীরা। রাবেয়া-রোকেয়াকে ফিরে পেয়ে আন্দন্দে উদ্বেলিত গোটা গ্রাম। জটিল অপারেশন আর দুশ্চিন্তা কাটিয়ে সুস্থ রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফেরায় খুশি সবাই। এখন শিশু দুটির বয়স ৪ বছর ৩ মাস।
বাড়িতে পৌঁছার পর স্বজন-প্রতিবেশীরা যেভাবে তাদের ফুলের শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়, এতে শিশু দুটির পরিবার অভিভূত বলে জানায়। শিশু দুটির বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, এই আনন্দের উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
শিশু দুটির বাবা রফিকুল ইসলাম চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান, ২০১৯ সালের ১ থেকে ৩ আগস্ট রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৩ ঘণ্টার ‘অপারেশন ফ্রিডম’ চলে। জটিল খুলি ও ব্রেইন অপারেশনে ৩৪ জন হাঙ্গেরিয়ান সার্জিক্যাল টিম এবং হাঙ্গেরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে সিএমএইচের নিউরো অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, নিউরো ও প্লাস্টিক সার্জনসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের শতাধিক সার্জন ও অ্যানেসথেসিওলজিস্ট অংশ নেন। এ ধরণের অপারেশন সারা বিশ্বেই বিরল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম।
বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় রাবেয়া-রোকেয়া। সেখানে দুই স্তরে তাদের মস্তিষ্কের রক্তনালীতে অপারেশন করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শিশু দু’টিকে হাঙ্গেরি পাঠানো হয়। হাঙ্গেরিতেও শিশু দু’টির ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়।
রাবেয়া-রোকেয়ার মা তাদের সন্তানের চিকিৎসার ভার নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
রারেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে অনেক ঝামেলা, বিপদ গেছে। কতজন কটু কথা বলেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে তিনি এ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে জানান।
রাবেয়া-রোকেয়ার মা তাসলিমা খাতুন জানান, তাদের পরিবার সবার ভালবাসায় মুগ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সব ব্যয়ভার না নিলে তারা এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসার কথা ভাবতেও পারতেন না। জোড়া মাথার বাবা-মারা যেন হতাশ না হয়। এর আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। যার প্রমাণ তার মেয়েরা।
তাসলিমা খাতুন আরো জানান, তাদের জোড়া মাথা আলাদা করার পর যদি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে, সেটা আমাদের জীবনে সবচেয়ে খুশির খবর হবে।
উল্লেখ্য, পাবনার চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামের শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম-তাসলিমা খাতুনের সন্তান রাবেয়া-রোকেয়া। ২০১৬ সালের ১৬ জুন সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম হয় এই মাথা জোড়া যমজ কন্যার। এই দম্পতির সংসারে রয়েছে সাড়ে আট বছরের আরো একটি সুস্থ কন্যা সন্তান।
আগামীনিউজ/মালেক