টাঙ্গাইল: মুখে হেক্সিসল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা, নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলায় স্বামী ফয়সাল আহমেদ রিপনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ ) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ফয়সাল আহমেদ রিপন কালিহাতী উপজেলার হাওড়াপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ডিগ্রী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। বিষয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আলী আহমেদ নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৫ মে চার লাখ টাকা দেনমোহর ধার্যে ধনবাড়ী উপজেলার দড়িবিয়াড়া গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাক সরকারের মেয়ে রাফিজা সুলতানার সঙ্গে ফয়সাল আহমেদ রিপনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা যৌতুক হিসেবে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও একটি মোটর সাইকেল দেন। বিয়ের এক বছর পর ডিপিএসের মাধ্যমে টাকা জমানোর কথা বলে ফয়সাল ১০ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করে তার বাড়িতে দুটি ঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার তার স্ত্রীকে কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন ফয়সাল। কিন্তু এখনও গৃহবধুকে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার কিনে দেয়া হয়নি। অপরদিকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌর এলাকায় জায়গা কেনার জন্য ফয়সাল তার স্ত্রীকে বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ এনে দিতে বলেন। বাবার কাছ থেকে টাকা আনতে না পারায় ফয়সাল তার স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন।
গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাফিজাকে পাঁচ লাখ টাকা আনার জন্য তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন ফয়সাল। পরবর্তীতে গত ৭ আগস্ট এ নিয়ে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেই সালিশে ফয়সাল পাঁচ লাখ টাকা না দিলে তার স্ত্রীকে বাড়ি নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর কৌশলে রাফিজাকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এলেঙ্গায় স্বামী ফয়সালের বোনের বাড়িতে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে ফয়সাল আহামেদ রিপন, শ্বশুর মো. ইসমাইল হোসেন, ভাসুর রনজু মান্নান ও ভাবি মোছা. কুসুমসহ কয়েকজন জোরপূর্বক রাফিজা সুলতানাকে হেক্সিসল খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। তাৎক্ষণিক ৯৯৯-এ ফোন করলে গৃৃহবধুর ফোন কেড়ে নেয় অভিযুক্তরা।
পরে রাফিজা সুলতানার অবস্থা অবনতি হলে অভিযুক্তরা তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় রাফিজা সুলতানা বাদী হয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর ফয়সাল আহমেদ রিপনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলা দায়ের করেন। ১৩ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর থেকে ফয়সাল আহমেদ রিপনসহ পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে ছিলেন।
বাদি পক্ষের আইনজীবী হারুন অর রশিদ জানান, ফয়সাল আহমেদ রিপন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।