নারায়নগঞ্জঃ জেলার “জলে না সড়ক বাতি। রাতের আধাঁর নামার সাথে সাথে নেমে আসে ভুতুরে অন্ধকার। জমতে থাকে মাদকসেবীদের আড্ডা। বেড়ে যায় ছিনতাইকারীদের আনাগোনা। নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবে ভুলতা ফ্লাইওভার এখন আতঙ্কের নাম। লোকে বলে ভয়ঙ্কর রাতের ফ্লাইওভার।”
নারায়ণগঞ্জের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ভূলতা ফ্লাইওভারের দুটি অংশ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক উদ্বোধনের পর কিছু দিন সড়ক বাতির আলো জ্বললেও এখন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত।
বেশ কিছু দিন ধরে ভূলতা ফ্লাইওভারে আলো না জ্বলাতে অপরাধী চক্ররা রয়েছে সক্রিয়। রূপগঞ্জে ভূলতা ফ্লাইওভারটি যানজট নিরসনে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও রাতের বেলায় এই ফ্লাইওভার অনেকের কাছে ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। সূর্যের আলো নিভে গেলেই ফ্লাইওভারে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। আলো ও সিসি ক্যামেরা না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
আর গভীর রাতে ফ্লাইওভারটি রীতিমতো ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাত ১১টার পর ছিনতাইকারীর ভয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে যানবাহন চলাচল করে না। যারা না জেনে গভীর রাতে ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করে তাদের বিপদে পড়তে হয়। শুধু তাই নয় ভুতুড়ে পরিবেশের কারণে অনেক যানবাহনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আলো না থাকার ফলে মাদকসেবীরা নির্বিঘ্নে মাদক সেবন করে। এখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফেনসিডিলের খালি বোতল। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় এখন রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকে ৩৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ফ্লাইওভার।
এ অবস্থায় রাতে ফ্লাইওভারটিতে যানবাহন চলাচলে হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ এবং জনমনে বিরাজ করে আতঙ্ক। সরেজমিনে গিয়ে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পুরো ফ্লাইওভার ঘুরে মেলেনি আলোর দেখা। অন্ধকারে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সদর থেকে আসা ট্রাক চালক কোরবান আলী বলেন, আমি প্রায় সময়ই এ ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করি। রাতে অনেককেই মোটরসাইকেল নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। অনেকে বসে মাদক সেবন করে, তখন খুব ভয় লাগে। যদি লাইট জ্বলতো তাহলে এতটা ভয় লাগত না। সিএনজি চালক লোকমান বলেন, সর্বোচ্চ রাত ১১টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করে। এরপরে আর কেউ সাহস করে ফ্লাইওভার দিয়ে যায় না। কারণ অন্ধকারের মধ্যে ওৎ পেতে থাকে ছিনতাইকারীরা।
যানবাহন চলাচল কম থাকায় নির্বিঘেœ ছিনতাইকারীরা সব লুটে নিয়ে যায়। কারওয়ান বাজার থেকে মুরগি বিক্রি করে আসা নরসিংদীগামী এক ব্যবসায়ী ও পিক-আপ চালক বলেন, লাইট ছাড়া ফ্লাইওভার অনিরাপদ। পৃথিবীর কোনো দেশে ফ্লাইওভার অন্ধকার নেই। কিন্তু ভূলতা ফ্লাইওভারে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রায়ই ছিনতাই, যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগেও ছিনতাইকারীরা গাড়ি আটক করে আমার কাছ থেকে নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এক রিকশা চালক বলেন, এই ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর থেকে কিছুদিন আলো জ্বলে আবার অন্ধকার হয়ে যায়। আবার মাঝে মাঝে দিনের বেলায়ও আলো জ্বলতে দেখতাম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাউছিয়া কাঁচাবাজারের পাশে ভূলতা ফ্লাইওভারের বিদ্যুতের মিটারটি এখনো চলমান রয়েছে। তাহলে ভূলতা ফ্লাইওভারের লাইটগুলো জ্বলে না কেন? এ ব্যাপারে ভূলতা ফ্লাইওভারের ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের এক বছর পর্যন্ত আমাদের আওতায় ছিল। এক বছর অতিক্রম হওয়ায় ফ্লাইওভারের বিষয়ে আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। আলো জ্বলবে কি জ্বলবে না সেটা আমাদের বিষয় না। এই দায়িত্বে কারা আছেন তাও জানা নেই।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-২ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারের বিদ্যুতের বকেয়া বিল থাকা সত্বেও লাইন এখনো চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে (রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার) ‘গ সার্কেল’ এএসপি মোঃ মাহিন ফরাজী বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারটি অন্ধকার থাকায় পুলিশের টহল আরো বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তবে ফ্লাইওভারটি অন্ধকার থাকলে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারের অন্ধকারের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে শীঘ্রই আলো জ্বলে উঠার ব্যবস্থা করছি।
আগামীনিউজ/এএস