ভোলাঃ মহিষের খামার করে মাত্র ১-২ বছরের মধ্যেই ভাগ্য পরিবর্তন হত ভোলার খামারিদের। কিন্তু বর্তমানে শীতের শুরুতেই মহিষ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন ভোলার মহিষের খামারিরা।
খাবার সঙ্কট, চর্ম, খোরা, বাত রোগ ও নদীর লবণাক্ত পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মহিষ। এসব কারণে কোথাও কোথাও মারাও যাচ্ছে মহিষ। যার কারণে মহিষ নিয়ে চরম বিপদে দিন কাটাচ্ছেন ভোলার মহিষের খামারিরা।
সরেজমিনে মহিষের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকেই ভোলার বিভিন্ন চরে মহিষ পালন শুরু হয়। বর্তমানে সরকারি হিসাব মতে জেলার সাত উপজেলার ২১টি চরে ১৭৩টি মহিষের খামার রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে মহিষের খামার ও মহিষের সংখ্যা দ্বিগুণ। এসব খামারিরা বেশিরভাগই মহিষের দুধ বিক্রি করে ও ঈদের বাজারে মহিষ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
মহিষের খামার করে ১-২ বছরের মধ্যেই ভাগ্য বদল হওয়ায় দিন দিনই বাড়ছে চরাঞ্চলে মহিষের খামার। কিন্তু বর্তমানে শীতের শুরুতেই চরাঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে ঘাসের তীব্র সঙ্কট।
ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর চুটকীমারা এলাকার মহিষের মালিক মো. জামাল উদ্দিন জানান, আমি এ চরে গত ২০ বছর আগে ৫টি মহিষ দিয়ে মহিষ পালন শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমার ৫০টি মহিষ রয়েছে। প্রতিদিন মহিষের দুধ ও কোরবানি ঈদের সময় মহিষ বিক্রি করি।
ভেদুরিয়া ফেরিঘাটের চর এলাকার মহিষের মালিক মো. রবিন জানান, আমরা দীর্ঘদিন এ চরে মহিষ পালন করে আসছি। কিন্তু বর্তমানে শীত মৌসুমে চরে ঘাসের খুবই সঙ্কট। ঠিকমতো মহিষকে ঘাস খাওয়াতে না পারায় মহিষগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে, আমরা মহিষ নিয়ে বিপাকে রয়েছি।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চর মদনপুর এলাকার মহিষের মালিক মো. আজিজুল ইসলাম জানান, আগে একেকটি মহিষের ৪-৫ কেজি দুধ হত। কিন্তু এখন মহিষকে ঠিকমতো খাবার না খাওয়াতে না পারায় সর্বচ্চো ১ কেজি দুধ হয়। এতে আমরা মহিষ মালিকরা খুবই লোকসানে আছি।
একই এলাকার মহিষ মালিক মো. সাগর মিয়া জানান, বর্তমানে মহিষের চর্ম, খোরা, বাতসহ শীতজনিত রোগ হওয়ায় মহিষ নিয়ে অনেক বিপদে আছি।
ভেদুরিয়া ফেরিঘাট চর এলাকার মহিষ মালিক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চরে মহিষের খাবার না থাকায় এখন কচুরিপানা খাওয়াই। শীতের কারণে নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ায় নদীর পানি খেয়ে ডায়রিয়া হয়ে গত ৪ দিন আগে আমার তিনটি মহিষ মারা গেছে।
ভোলা সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দীনেশ চন্দ্র মজুমদার বর্তমানে ঘাসের সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জানান, শীত মৌসুমে মহিষ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মহিষ মালিকরা রোগের লক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে চরাঞ্চলের মহিষ মারা যাবে না। এছাড়াও তিনি খামারিদের সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলার সাত উপজেলায় ২১টি চরে ১৭৩টি খামারে ১ লাখ ২৪ হাজার মহিষ রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা দ্বিগুণ।
আগামীনিউজ/প্রভাত