জেলখানা থেকে বেরিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে গণধর্ষণ

জেলা প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০, ০৩:১৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত

খাগড়াছড়িঃ 'জেলায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার সাতজনই বিভিন্ন মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামি। তারা অস্ত্র, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে সাজাভোগ করেছে। কারাগারে থাকাকালীন আসামিদের মধ্যে পরিচয় হয়। জেলখানা থেকে বের হয়ে আসামিরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।’

আজ রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার দাবি করেন, ‘ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাই বিভিন্ন মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামি। অস্ত্র, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে সাজা ভোগ করেছে।

বুধবার রাতে মামলার প্রধান আসামি আমিনের নেতৃত্বে মো. বেলাল হোসেন, মো. ইকবাল হোসেন, মো. আবদুল হালিম, শাহিন মিয়া, মো. অন্তর, আবদুর রশীদসহ ৯ জন সংঘটিত হয়। এরা মাটিরাঙা থেকে অটোরিকশায় ২০ কিমি পথ দূরের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গোলবাড়ি ইউনিয়নসংলগ্ন বলপেয়ে আদমের ভিকটিমের বাড়িতে ঢুকে। এ সময় তারা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ফেলে।

ঘরে ঢুকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীর হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে তাদের প্রতিবন্ধী নারীকে আলাদা কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণে পালাক্রমে ৯ জনই অংশ নেয়। এদের মধ্যে কয়েকজন একাধিকবার প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করে। প্রায় ২ ঘণ্টা বাড়ির ভেতরে অবস্থান করে। স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশের অভিযানে স্থানীয় মানুষ সহযোগিতা করেছে বলে অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয়েছে।’

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ঘটনার পর থেকেই আসামিদের আটক করতে তৎপর হয় পুলিশ।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি মো. আমিন, মো. বেলাল হোসেন, মো. ইকবাল হোসেন, মো. আবদুল হালিম, শাহিন মিয়া, মো. অন্তর, আবদুর রশীদকে আটক করে খাগড়াছড়ি সদর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ।

খাগড়াছড়িতে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।এ সময় তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ ঘটনায় জড়িতার প্রত্যেকে পেশাদার অপরাধী। তারা পূর্বকল্পিত ও সংঘটিত হয়ে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িতদের প্রত্যেকের আইনে মুখোমুখি করা হবে। ধর্ষকদের রাজনৈতিক পরিচয় কি সেটি আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। অপরাধী যে অপরাধ করেছে, তার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে।

এ ঘটনায় কেউ যাতে সাম্প্রদায়িকতা না ছড়াতে পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. গোলাম আফসার জানান, আসামিদের বিকালে আদালতে তোলা হবে। তারা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিলে রিমান্ড চাওয়া হবে না।

এর আগে শনিবার আমলী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয় ধর্ষণের শিকার ওই নারী। এদিকে রোববার সকালে বলপেয়ে আদমে নারী ধর্ষণের ঘটনায় খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম এবং মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল। এ সময় তারা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন বলপেয়ে আদম এলাকায় গভীর রাতে দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে এক প্রতিবন্ধী নারীকে (২৬) গণধর্ষণ করে ৯ ধর্ষক। ঘটনার পর দিন বৃহস্পতিবার থানায় মামলা করে ধর্ষণের শিকার নারীর মা। মামলার ৯ আসামির মধ্যে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি দুজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

আগামীনিউজ/এএইচ