ঢাকা : যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি অবস্থায় তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা ও ১৫ কিশোর আহত হওয়ার ঘটনায় আটক ওই কেন্দ্রের পাঁচ কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান আজ রোববার সকালে এ কথা জানান। এর আগে তিনি ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।
গত বৃহস্পতিবার শিশু কেন্দ্রে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করে ওই ৫ জনকে দায়ী হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশ।
এদিকে, গতকাল শনিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ওই পাঁচ কর্মকর্তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহদী হাসান। পাঁচজনের মধ্যে কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ ও সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানের পাঁচ দিন করে এবং কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক ও ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর এ কে এম শাহানুর আলমের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহত হয়। ঘটনার ছয় ঘণ্টা পর কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, দুই দল কিশোরের মধ্যে সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় আরো কয়েকজন। যদিও পরে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কথিত সংঘর্ষের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে জানায়, কিশোরদের একতরফা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরদের জবানিতেও উঠে এসেছে দিনভর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা। তারা অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পরে নিহত কিশোর রাব্বির বাবা রোকা মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করে।
এ ঘটনায় নিহতরা হলো খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল সুজন (১৮) ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)।
যশোর জেলা শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরের শহরতলি পুলেরহাট এলাকায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটি অবস্থিত। এখানে প্রায় ২৮০ কিশোর বন্দি রয়েছে।
কিশোরদের ভাষ্যমতে, এ ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ আগস্ট। এদিন কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী নূর ইসলাম কয়েকজন কিশোরকে তার মাথার চুল কেটে দিতে বলেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই নিরাপত্তাকর্মী পরিচালকের কাছে কিশোরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন যে তারা মাদকাসক্ত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বন্দিদের কয়েকজন নূর ইসলামকে মারধর করে। তার পরই তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে।
আগামীনিউজ/এসপি