কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ জুন ২৮, ২০২০, ০৭:০৭ পিএম
সংগৃহীত ছবি

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার ফলে জেলার ১৬টি নদনদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। করোনার কারণে টানা তিনমাস ঘরে বন্দি মানুষজনের কাছে চরম দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে বন্যা। হাতে কাজ না থাকায় বিপাকে পরেছে এসব এলাকার মানুষ। 

এদিকে সরকারিভাবে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জেলা প্রশাসনের কাছে সার্বিবভাবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংরক্ষণ না করায় প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছে সবাই। তবে জেলা ত্রাণ বিভাগ ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে বন্যায় ১ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে নিমজ্জিত বা ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার হেক্টর বলে সংশ্লিষ্ট কৃষক ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে জানা গেছে। মৎস বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ইতিমধ্যে শতাধিক পুকুর প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছচাষীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩২  ও চিলমারীতে ৩৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৬০ ও ৭২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুলাইয়ের প্রথম দিকে ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি সিবধতিশীল থাকবে বলে আবহাওয়া সূত্রে জানা গেছে।

বন্যার কারণে ব্রহ্মপূত্র অববাহিকার গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে সকল ধরণের ফসলাদি তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। এছাড়াও থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে জ্বালানী নষ্ট হওয়ায় রান্না করতে পারছে না ভুক্তবোগী জনপদের মানুষ। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যার ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিরক্ষা বাঁধ। সদ্য মেরামত করা এ বাঁধগুলো এখন হুমকীর মূখে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরের কৃষক জব্বার, মজিদ ও দিনমজুর আব্বাস আলী জানান, বৃষ্টির কারণে রান্না করতে না পারায় দুপুর পর্যন্ত খাওনের কোন ব্যবস্থা হয়নি। একই গ্রামের সরবেশ আলী জানান, গরু দিয়েই আমার সংসার চলে। ঘরে ১২টা গরু রয়েছে। এখন মানুষের চেয়ে গো-খাদ্য নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যায় ৩০২ মে.টন চাল বরাদ্দের পাশাপাশি ৩৬ লক্ষ ৫০হাজার টাকা উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা প্রতিদিন বন্যা কবলিতদের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কেউ যাতে খাদ্য সংকটে না পরে এবং যাদের নিরাপদে সড়িয়ে নেয়া দরকার তাদের পাশে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে কাজ করছে।

আগামীনিউজ/জাহিদ/জেএস