করোনা: দিশেহারা দিনাজপুরের টমেটো চাষীরা 

দিনাজপুর প্রতিনিধি এপ্রিল ২৭, ২০২০, ০৫:০২ এএম

ধানের জেলা দিনাজপুরে গ্রীস্মকালীন নাবি জাতের টমেটো চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ জাতের টমেটো চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ অঞ্চলের কৃষক। কয়েক’বছর ধরেই এই জাতের টমেটো চাষ করে কৃষক বেশ লাভবান হয়েছেন। কিন্তু এ বছর ভালো ফলন পেয়েও করোনাভাইনাসের কারণে টমেটো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

দেশে সবচেয়ে বেশী গ্রীস্মকালীন টমেটোর আবাদ হয় দিনাজপুরে। বিগত বছরগুলোতে নাবি জাতের এ টমেটো আবাদ করে ঘুরেছে এ জেলার অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। ফেব্রয়ারির শুরুতে কৃষক এ জাতের টমেটো আবাদ শুরু করে এবং ক্ষেত থেকে তা তোলা শুরু হয় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু এ বছর ভালো ফলন পেলেও করোনাভাইরাসের কারণে উৎপাদিত টমেটো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

দেশের রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কৃষক মো. মতিউর রহমান জানিয়েছেন, গ্রীম্মকালীন এই নাবি জাতের টমোটোর এই মৌসূমি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষ জড়িয়ে পড়ে।দিনাজপুরে এসে ভীড় করে ঢাকা,নারায়নগঞ্জ,খুলনা,চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। তাই,তিনিও এবার ২০ একর জমিতে এই জাতের টমেটো চাষ করেছেন। ফলনও পেয়েছেন ভালো।

কিন্তু, হতবার যে টমেটো ৮’শ থেকে হাজারাকা মন দরে বিক্রি বরেছেন, এবার তা বিক্রি করতে হচ্ছে,৮০ টাকা  থেকে ১০০ টাকা মন দরে। অথচ,তার উৎপাদন খরচ পড়েছে,প্রতিমন সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকায়। তিনি এবার টমেটো চাষ করে কমপক্ষে  পনেরো থেকে ষোল লাখ টাকা লোকসান খেয়েছেন।

শুধু তিনি নন, করোনার প্রাদূর্ভাবে বাইরের পাইকাররা না আসায় এবং টমেটো বাজারজাত করতে না পারায় কৃষক বিপাকে পড়েছেন। টমেটোর তুলে বিক্রি করার পর মজুরের খরচ না পাওয়ায় কৃষক টমেটো তোলা ছেড়ে দিয়েছে। তাই, ক্ষেতের টমেটো এখন ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে।

এ বছর দিনাজপুর জেলায় ১ হাজার এক’শ ১৩ হেক্টর জমিতে এই নাবি টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশী চাষাবাদ হয়েছে সদরের গাবুড়া, কাউগাঁ,পাঁচবাড়ী,জনতা মোড়,কমলপুর এবং বিরলের পুরিয়া গ্রাম এলাকায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় এই টমেটো আবাদ কওে বিগত বছরগুলোতে বেশ লাভবান হওয়ায় কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষকরা এই নাবি জাতের টমেটো চাষে ঝুকেছে। এ টমেটো চাষে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। কিন্তু এ বছর ভালো ফলন পেয়েও করোনাভাইনাসের কারণে টমেটো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এমনটা স্বীকার করছেন কৃষি বিভাগ। তাই,এই টমেটো করোনায় ত্রাণ সাহায্য কার্যক্রমে তালিকাভুক্ত করার আহবান জানিয়েন দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে উৎপাদিত টমেটো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বাজারজাত করতে না পারায় এই টমেটো ক্ষেতেই বিনষ্ট হচ্ছে। যেখানে সেখানে পড়ে আছে,টমেটো। টমেটো গরুর-ছাগলে খাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ মৌসুমে  টমেটো চাষ করে চরম লোকসানের মুখে পড়বে কৃষক,এমনটাই মন্তব্য করছেন,কৃষিবিদরা। 

আগামী নিউজ/ শাহ্ আলম/ তামিম