নীরবতার ফাঁকে কেবলই কান্না, সাদা শাড়িতে বউ-শাশুড়ি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি মার্চ ৫, ২০২০, ১১:২৩ এএম

একদিন আগেও উচ্ছ্বাসে ভরা ছিল পরিবারটি। এক দিনের ব্যবধানে পরিবারে নারীদের পরনে রঙিন শাড়ির পরিবর্তে সাদা শাড়ি। প্রাণোচ্ছল বাড়িটিতে এখন অসহনীয় নীরবতার ফাঁকে ফাঁকে কেবলই কান্নার আওয়াজ। সবার চোখে পানি, চেহারায় রাজ্যের হতাশা। এক নিমিষেই পুরুষশূন্য হয়ে পড়ল পুরো পরিবারটি।

গত মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) দুপুরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজীনগর বাজার এলাকায় বিজিবির সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত। তাদের মধ্যে দুই ছেলেসহ নিহত হন সাহাব মিয়া। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মাথার ওপর ছাতার মতো থাকা বাবা আর দুই ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করছে সাহাব মিয়ার চার মেয়ে মোরশেদা বেগম, আলেয়া বেগম, জুলেখা বেগম ও নিফুলা বেগম। তাদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছেন আকবর আলীর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আমেনা আক্তার। অন্যদিকে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে আছে আহাম্মদ আলীর পাঁচ মাস বয়সী শিশুকন্যা আনিছা ও আকবর আলীর ছয় মাসের শিশুকন্যা মায়া।

স্বামী ও দুই সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় রঞ্জু বেগম। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই স্বামী আর সন্তান হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করে বসলেন তিনি। বললেন, বিজিবি সামনে থেকে গুলি করে আমার স্বামী আর দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। পাঁচজন মানুষ মারা গেল, কি অপরাধ ছিল তাদের।

‘আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব। আমার দুই পুত্রবধূর কি হবে। যে বয়সে লাল শাড়ি পরে আনন্দ করার কথা সে বয়সে কোন অপরাধে তাদেরকে সাদা শাড়ি পরতে হল? কি হবে আমার নাবালক নাতনিদের? আমার ভাঙা ঘরে কে আলো জ্বালাবে?’ বলতে বলতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্বামী-সন্তানহারা রঞ্জু বেগম।

এদিকে, উক্ত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, ‘বিজিবি কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এ হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ঘটনার তদন্ত করে গৃহীত ব্যবস্থা কমিশনকে জানানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

উল্লেথ্য, গত মঙ্গলবার নিজের বাগানের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে মাটিরাঙ্গার গাজিনগরে বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিজিবি গুলি করলে ঘটনাস্থলেই সাহাব মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী নিহত হন।


সেই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মারা যান বিজিবি সদস্য শাওন ও আহাম্মদ আলী। নিহত আহাম্মদ আলী সাহাব মিয়ার ছেলে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান মো. মফিজ মিয়া। 

আগামীনিউজ/মিজান