মানিকগঞ্জঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ (হরিরামপুর, সিঙ্গাইর ও সদরের হাটিপাড়া, ভাড়ারিয়া ও পুটাইল ইউনিয়ন) আসনে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তার মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
হরিরামপুরের সাধারণ ভোটার ও নেতা-কর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, এমপি মমতাজ বেগম তার প্রতিশ্রুতির অনেক কাজ করতে পারেননি এবং মিথ্যা বলে ভোটের দাবি করছেন। তাছাড়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে কটাক্ষের কারণে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে অনেকে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। মমতাজ বেগম দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাহিদ আহমেদ টুলু মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। এছাড়াও তিনি এই আসনে ব্যাপক দান করে, দানবীর নামেও পরিচিত হয়েছেন। সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও হরিরামপুরের সাবেক সাংসদ প্রয়াত সামছুদ্দিন আহমেদের ছেলে। তাই ভোটাররা মনে করছেন এবার ত্রিমুখী নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে। শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, এবার এই আসনে নৌকার জেতা অনেকটাই কঠিন চাপ হবে।
গণমাধ্যম কে দেয়া এক বক্তব্যে মমতাজ বেগম বলেন, "আমার মনে হয় চমৎকার নির্বাচন হবে। প্রার্থী যত বেশি হবে তাতে, আমার নৌকার কোন সমস্যা হবে না। কারণ নৌকার যারা ভোটার, যারা শেখ হাসিনা কে ভালোবাসে, আওয়ামী লীগ করে, যারা নৌকার মানুষ; তারা দিনশেষে নৌকার বাইরে কেউ ভোট দেবে না।"
আর স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু বলেন, "যারা সিংগাইর, হরিরামপুরকে লিড করে তারা আমার সাথে যোগদান করেছেন। আমাদের হরিরামপুরের কৃতিসন্তান আমাদের জেলার মুরুব্বি এবং বটবৃক্ষ আমার মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন সাহেবও আমাকে সাপোর্ট করেছেন। এছাড়া হাজার হাজার সাধারণ মানুষ আমাদের সাথে আছে। সেই দিক থেকে আমাদের পরাজয় হওয়ার কোন কারণ নেই ইনশাআল্লাহ।"
হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, দানবীর এবং পরহেজগার একজন ব্যক্তি দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। উনি বহু মসজিদ, শত শত মানুষকে কর্মসংস্থানের জন্য সিএনজি, জমিসহ ঘর দান করেছেন। ওনার মন অত্যন্ত সরল, মানুষ হিসেবে তিনি অতুলনীয়। তাই এবার টুলু ভাই ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, মমতাজের দাবিকৃত পদ্মার বেড়িবাঁধ আমার করা। ওইটা করছি আমরা ২০১১ সনে। অনুমোদন করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে পাঠিয়েছিলাম। সেইটা আসছে উনার (মমতাজের) সময়, উনি উদ্বোধন করছেন। তখনও তিনি এটা দাবি করেনি এটা ওনার। পরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বেড়িবাঁধ উনি (মমতাজ) করছেন বলে মিথ্যা একটা গুজব উঠিয়ে, মিথ্যা কথা বলে ভোটের দাবি করেন। এছাড়া মমতাজের জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কে নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদে আমরা সবাই টুলু ভাইয়ের হয়ে কাজ করছি।
সিংগাইর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার বলেন, সিংগাইরের অধিকাংশ চেয়ারম্যান, মেম্বারই এবার টুলু ভাইয়ের সাথে। ট্রাক মার্কার সাথে, আমরা আশাবাদী এবার ব্যাপক ভোটে টুলু ভাই জয়ী হবেন।
হরিরামপুরের সাবেক যুবলীগ নেতা এফ এ আক্কাস বলেন, সাহাবুদ্দিন চঞ্চল তরুণ উদীয়মান একজন নেতা। যথেষ্ট বিনয়ী, মেধাবী ভদ্র ও মানবিক একজন মানুষ। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। তার পিতা প্রয়াত সামসুদ্দিন আহমেদ সংসদ সদস্য ছিলেন। তৎকালীন তিনি হরিরামপুর পদ্মা ভাঙ্গন রোধে বেড়িবাঁধের জন্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দপ্তরে কাগজপত্র জমা দেন। সেই সুফল এখন পদ্মাপাড়ের লোকজন পাচ্ছে। পদ্মার স্থায়ী বেড়িবাঁধ, অবহেলিত হরিরামপুর এর উন্নয়ন ও গরীব দুঃখী মানুষ সবসময় এই তরুণ নেতাকে পাশে পাবে এবং হরিরামপুরের একক প্রার্থী হিসেবে সাধারণ জনগণ এবার তাকেই ভোট দিবেন বলে আমরা আশাবাদী।
অপু সাহা/এমআইসি