নারী শিক্ষার্থীসহ দুইজনকে মারধরের অভিযোগ জবি ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে

জবি প্রতিনিধি নভেম্বর ২, ২০২৩, ১০:০৫ এএম

ঢাকাঃ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক নারী শিক্ষার্থীসহ দুইজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

 

ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ১৫তম ব্যাচের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে তহমিনা জেরিফ মিশু এবং অপর জন একই ব্যাচের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশনের শিক্ষার্থী ছোলায়মান খান।

 

এ ঘটনায় বুধবার ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নিকট পৃথক দুইটি অভিযোগ দিয়েছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায় গেছে, সাদেক খান, শুভ সাহা ও শরিফুল ইসলাম হিমু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অভিযুক্ত সাদেক হাসান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পদার্থবিজ্ঞান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

 

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় টিএসসির পেছনে ছোলায়মান আর তার বন্ধু শিশু চা শেষ করে কাপ দিতে যায়। তখন সেখানে বসার টুল না থাকায় এটা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাদেকের সাথে কথা বলতে গেলে রাগান্বিত হয়ে কথা বলে। তখন মিশু বুঝাতে গেলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। ছোলায়মান থামাতে গেলে সাদেক রাগান্নিত হয়ে তেড়ে আসে। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১২ ব্যাচের হিমু ও শুভ সহ আরও ৪-৫ জন। তারা পূর্বের কোন ঘটনা না জেনেই তাদের উপর চড়াও হয় এবং বাকবিতণ্ডা শুরু করে এবং এক পর্যায়ে মিশুকে হুমকি দেন।

 

এসময় মিশুকে উদ্দেশ্য করে তারা বলে, তুই ছেলে হলে তোকে মাটিতে পিসিয়ে ফেলতাম। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তারা স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করলে হিমু ও শুভ মিশুকে মারতে উদ্যত হয়। ছোলায়মান বাধা দিতে গেলে তার উপর আক্রমণ করে। তাকে মারতে দেখে মিশু বাধা দিতে যায় তখন সাদেক মিশুকে আঘাত করে। ছোলায়মান মিশুকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাদেক তাদের দুইজনকে মারতে মারতে গলি থেকে রাস্তায় নিয়ে আসে। এতে ছোলায়মান মাথায়, হাতে এবং ঘাড়ে প্রচন্ড আঘাত পায়। ঘটনাস্থলে তার জুতা ছিঁড়ে যায় এবং চশমা পড়ে ভেঙ্গে যায়।

 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জেরিফ মিশু বলেন, ‘আমাকে সবাই মিলে হাত তুলে মারতে উদ্ধৃত হয়।আমার সাথে থাকা বন্ধু আমাকে বাঁচাতে গেলে তার গায়ে গা হাত দেয় এবং ধাক্কাতে থাকে। আমি বাঁধা দিতে গেলে আরোও ক্ষিপ্ত হয়ে সেরে মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেয় এবং কিল, চড়, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমার বন্ধু আমাকে মার থেকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। দুইজনকে মারতে মারতে রাস্তায় নামিয়ে আনে। এমনকি পরবর্তী সময়ে আমার বন্ধুকে আরো মারধর করার হুমকি দেয়।’

 

আরেক ভুক্তভোগী ছোলায়মান খান বলেন, ‘সাদেক সহ ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে টেনে হেঁচড়ে মারধর করে এবং আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং আমাদের ওপর হয়ে যাওয়া এমনতর নিকৃষ্টতম অত্যাচারের একটি বিচার হোক এবং এমন বিধ্বংসী শিক্ষার্থীদের আগ্রাসন থেকে আশ্রয় প্রদান কামনা করছি।’

 

এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত সাদেক খানকে বারবার কল দেয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

 

অপর অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম হিমু বলেন, ওই মেয়ের সাথে আমার কোন বাকবিতন্ডা হয় নাই। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। আমরা ফটোকপির দোকানে গেছি গিয়ে দেখি আমাদের ছোট ভাইদের সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে, আমি গিয়ে জানতে চাইলে তর্ক হয়। ওই মেয়ে সে জুনিয়র হয়ে আমাদের উপর কয়েকবার জুতা তুলেছে। গরম চা ছিলো তা ছুরে মারছে। আমার কলার ধরছে তখন আমি সিনিয়র হিসেবে ওই ছেলেকে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে ওই মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছি। 

 

মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শুভ সাহাকে বারবার কল দেয়া হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

 

এবিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে প্রক্টর অফিস থেকে আমাকে কিছু এখনও জাননো হয়নি। বিষয়টি কি হয়েছে তা দেখে জানাবো।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আবার অভিযোগ দিতে বলেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।