কুমিল্লাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মানববন্ধন করেছে কুমিল্লায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। বুধবার (৭ জুন) সকাল ১১টায় কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানান তারা।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য ওমর ফারুকী তাপসের সঞ্চলনায় বক্তারা বলেন, স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠ ও লেখনীকে রুদ্ধ করে দিতে এ হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ হামলা করে সাংবাদিকদের দমিয়ে রাখা যাবেনা। সাংবাদিকরা সবসময়ের মত আজও ঐক্যবদ্ধ। এমন ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ জানাই আমরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।
এসময় মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আবু মুসা বলেন, সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ের উপর দুর্বৃত্তদের এমন হামলা খুবই ন্যাক্কারজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাব সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার সমাধান করুন।
দৈনিক কালের কন্ঠের জেলা প্রতিনিধি আবদুর রহমান বলেন, সাংবাদিক সমিতির অফিসে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলছি হামলাকারীরা কাপুরুষের দল। তা না হলে এভাবে রাতের অন্ধকারে হামলা করতে পারেনা। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। হামলা করে সাংবাদিকদের দাবাইয়া রাখা যাবে না। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
দৈনিক সময়ের আলোর জেলা প্রতিনিধি ও কুমিল্লার কাগজের উপ-সম্পাদক জহির শান্ত বলেন, কুবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলার এতদিনেও কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাংবাদিকরা কেন আক্রমনের শিকার হয় তা আমরা জানি। দুর্বৃত্তরা যখন কোন অপকর্ম করে তা ডাকার জন্য তারা এ হামলা চালায়। সাংবাদিকরা বরাবরই হামলার শিকার হচ্ছে, হেনস্তার শিকার হচ্ছে কিন্তু তার কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। কোন বিচার না হওয়ায় বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তারাই ধারাবাহিকতা আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আপনারা সজাগ হোন।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইনকিলাবের কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি সাদিক হোসেন মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের কার্যালয়ে হামলা ও সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা দেখেছি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও জড়িত। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করে তারা লেখাপড়াও করে। আর যারা রাজনীতি করে তারা পাশাপাশি টিকাদারি করে। এখানেই মজা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আপনারা সাংবাদিকতা যারা করছে তাদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে তাদের দুর্বল করে দিতে চান। এছাড়া যারা রাজনীতি যারা করে তাদের মধ্যেও পিং সৃষ্টি করেছেন। আপনারা যদি নিজেদের দায়িত্ব ভালমতো পালন না করেন, ছাত্রদের যদি সন্তান সমতুল্য মনে না করেন তাহলে আপনাদের কপালে দুঃখ আছে।
এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের প্রতিনিধি খায়রুল আহসান মানিক বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালমন্দ নিয়ে লেখালেখি করে, দেশবাসীকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানায় তাদের হেনস্তা করেছে এবং অফিস ভাঙচুর করেছে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা সাহসী। এরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ইত্যাদির অনিয়ম নিয়ে কথা বলে। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের সাহসের পরিচয় আমি পেয়েছি। সাংবাদিকদের হেনস্তা ও কার্যালয় ভাংচুর একান্তভাবে এটা দুঃখের, ঘৃনার।
এসময় বুড়িচং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক বাবু, কুমিল্লা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মুন্সী, কুমিল্লার বার্তার সম্পাদক শামছুল আলম রাজন, জাগরনী টেলিভিশনের স্টাফ রির্পোটার আশিকুর রহমান আশিক, এখন টিভির ব্যুরো প্রধান খালেদ সাইফুল্লাহ, দৈনিক রূপসী বাংলার ফারুক আজম, দৈনিক আমাদের কুমিল্লার প্রতিবেদক সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ, জাগরনী টিভির জেলা প্রতিনিধি আয়েশা আক্তার, দুর্নীতির সন্ধানের প্রতিনিধি ম্যাক রানা, বাংলাদেশ সমাচারের বিশেষ প্রতিনিধি মো. শাফি, দৈনিক গণমুক্তির প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আকাশ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মুহা. মহিউদ্দিন মাহি ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইউসুফ আকাশসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নাঈমুর রহমান রিজভী/এমআইসি