রংপুরঃ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ২০১৭ সালের মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে অনিয়মের ঘটনায় শিক্ষক কর্মকর্তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করা হয়।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি গভীর রাতে পরীক্ষকের বিস্তারিত নম্বরপত্র ছাড়াই ২০১৭ সালের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছাড়াই উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সামসুল হক একই দপ্তরের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মন এ ফল প্রকাশ করেন। এমন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হোসেনকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ থেকে তড়িঘড়ি করে সরিয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হককে দায়িত্ব প্রদান করে তৎকালীন ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর প্রশাসন।
ফলাফল প্রকাশে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. নাজমুল হকের সাথে দেখা করলে তিনি পুনরায় ফল প্রকাশের আশ্বাস দেন। কিন্তু অদ্যবধি সেই ফলাফল সংশোধন করা হয়নি। এমনকি এ অনিয়মের ঘটনায় দুই বছর পার হলেও এখনো পরীক্ষার ফলাফলের বিস্তারিত কপি পরীক্ষকের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। যা একাডেমিক কর্মকাণ্ডে চরম অনিয়ম।
এ অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তার তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করে লিখিত অভিযোগ জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সর্ববৃহৎ সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ। এরই প্রেক্ষিতে এ কমিটি গঠন করে প্রশাসন। কমিটির সদস্যরা হলেন, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম, এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী।
এর আগেও তথ্য গোপন করে পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রকে পাশ দেখিয়ে ফলাফল প্রকাশে অনিয়মের অভিযোগ উঠে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সামসুল হকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠিত চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি সামসুল হকের অসতর্কতা ও অসেচতনতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনা। এই প্রতিবেদনের ভিত্তেতে পূর্ণ তদন্তের জন্য বাংলা বিভাগের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. নিতাই কুমার ঘোষকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির আহবায়ক ড.নিতাই কুমার ঘোষ বলেন, তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে একটি মিটিং হয়েছে। তদন্ত শেষ করতে আর একটু সময় লাগবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, আমি শুনেছি এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট এখনো আমরা পাইনি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে বসবো। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।
শিহাব মন্ডল/বুইউ