ঢাকাঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার আদিবাসী কড়া সম্প্রদায়ের লাপোল কড়া। এর আগে তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ছিলেন।
বৃহস্পতিবার(২৪ ফেব্রুয়ারি) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তিনি।
অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর লাপোল তাঁর ফেসবুক ওয়ালে আবেগঘন পোস্ট দেন।
লাপোল লেখেন, "আমি দাদাদের তুলনায় ভাগ্যবান, পথ দেখাবার মতো মানুষ পেয়েছি। আমি স্বল্প জ্ঞান নিয়ে, অন্নকষ্ট, বস্ত্রকষ্ট, সমাজের হাজারো প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিয়ে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসে পৌঁছেছি।"
"আজকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তির প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। আমি নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিষয়ে ভর্তি হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের সাগর, এই জ্ঞানের সাগরে ডুব দিতে চলেছি। পবিত্রতার সঙ্গে যেন আমি এই জ্ঞানের সাগরে স্নান করতে পারি, আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, পূজনীয় সবার কাছে আমি আশীর্বাদপ্রার্থী।"
লাপোলের বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার হালজায় ঝিনাইকুড়ি গ্রামে। জাবির আদিবাসী কোটার মেধাতালিকায় ২৪তম ছিলেন লাপোল।
লাপোল তার সম্প্রদায়ের প্রথম যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এই খবর শুনে তাদের সম্প্রদায়েও লেগেছে আনন্দের হাওয়া। কয়েকজন একসাথে বসলেই শুরু হয় লাপোলের সফলতার গল্প। তাদেরই সম্প্রদায়ের অজয় কড়া, পূজা কড়া, গীতা কড়া ও সুমি কড়া সবাই এখন স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।
যাকে ঘিরে সম্প্রদায়ের এত আনন্দ সেই লাপোল কড়া শোনালেন অবহেলা ও বঞ্চনার কথা। নানান সময়ে তারা বৈষম্যের শিকার হন।, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়েছে কিন্তু এর যথাযথ বিচার পাননি । এছাড়া একজন ভালো নাট্যকার হয়ে তিনি তার সম্প্রদায়ের অবস্থা তুলে ধরার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর এখন লাপোলের মা, বড়ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে চারজনের পরিবার। মা অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। নিজে কখনো স্কুলে না গেলেও ছেলেকে পড়াশোনার তাগিদ দিতেন তিনিই। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে এর জন্য আনন্দ প্রকাশ করেন তার মা।
কড়া সম্প্রদায় দেশের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় গুলোর একটি। ব্রিট্রিশ আমলে পারু রাজা দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ঝিনাইকুড়ি গ্রামে কড়া সম্প্রদায়ের জন্য কিছু জমি দিয়ে যান। সেখানেই কড়া সম্প্রদায়ের ২৮ টি পরিবারের বাস।
আগামীনিউজ/এমবুইউ