ঢাকাঃ ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বিরুদ্ধে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে প্রদানের অভিযোগ ওঠে। সেই অর্থ প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সে সময়কার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে তাদের পদ থেকে সরানো হয়। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনিত সেই অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে এক বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন ছাত্রলীগের অভিযুক্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
২০১৯ সালের সেই ঘটনায় অভিযোগ তদন্তসহ ৩ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তবে আগামী ২ মার্চ উপাচার্যের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হতে গেলেও আনিত অভিযোগের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
সেসময় অভিযোগ করা হয়, অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৪৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়।
যদিও উপাচার্য ফারজানা ইসলাম দাবি করেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকে কোনো টাকা দেননি। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার কাছে কমিশন চেয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
জানা যায়, এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে জলঘোলা হতে থাকলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের পক্ষ থেকে তখন উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) “২ বছরেও শেষ হয়নি জাবি উপাচার্যের অনিয়ম অভিযোগের তদন্ত” শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টারে অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদের লিঙ্ক শেয়ার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদচ্যূত সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার নিজস্ব ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘আমার কাছে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে ও ভিসি ম্যাম ও তার পরিবারের দুর্নীতির সব তথ্য-প্রমাণ আছে, তদন্তকারীদের সেগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু দুদক, ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের চরম নিষ্ক্রিয়তা দুর্নীতিকে আরো প্রশ্রয় দেয়ার শামিল!’
তিনি আরও লিখেন, ‘ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায়, কিন্তু জেগে ঘুমের ভান ধরে থাকা কাউকে জাগানো কঠিন! দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই!’
এদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্তে সময়ক্ষেপণের বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, 'এটা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। করোনার দোহাই দিয়ে তারা তদন্ত আটকে রেখেছেন। করোনার ভেতর তো কতো তদন্ত শেষ হয়ে ফাঁসির রায় পর্যন্ত হয়ে গেলো। সরকার ও ইউজিসি বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমজনতার ট্যাক্সের টাকায় চালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনিত এমন অভিযোগ তদন্ত করা, জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করা এবং দেশবাসীকে এসব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া সরকারের কর্তব্য।'
আগামীনিউজ/এমবুইউ