১৬৩ ঘণ্টা পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন ভেঙেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তবে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক। দীর্ঘ সময় খাবার গ্রহণ না করার কারণে শিক্ষার্থীদের শরীরে গ্লুকোজ কমে গেছে। ধীরে ধীরে তারা মৃত্যুর দিকে যাচ্ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শাবি ক্যাম্পাস সস্ত্রীক পৌঁছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালল। এসময় শিক্ষার্থীদের তিনি জানান, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এরপর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কী করেছো। বাংলাদেশ ৩৪টা ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর বলেছেন যে, এই ইউনিভার্সিটির ভিসি যদি পদত্যাগ করেন তাহলে তারা সবাই পদত্যাগ করবেন। এটা দেখার খুবই শখ আমার।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এরকম ভাইস-চ্যান্সেলররা আছেন যাদের আদর্শ এত বেশি যে উনারা অন্যর সহমর্মিতায় নিজেরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার মনে হয় না আমার এ আশা সহজে মিটবে। তোমরা বড়ধরনের নাড়া দিয়েছো। এখন কাউকে কোথাও ভিসি পদে বসানো হলে তার যোগ্যতা নিয়ে সবাই চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে।
এক পর্যায়ে জাফর ইকবালের কথায় আশ্বস্ত হয়ে অনশন ভাঙতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় জাফর ইকবাল জানান, শিক্ষার্থীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তা দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। মানবিক সহায়তা দেয়া যদি অপরাধ হয় তাহলে আমি বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি আর্টিকেল লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকাটা আমি তোমাদের দিলাম। আমাকে অ্যারেস্ট করুক।
এর আগে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে সস্ত্রীক রওনা হন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ভোর চারটার দিকে তারা ক্যাম্পাসে পৌছান।
এছাড়া, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা জানান, আমরা যারা অনশন করছি, অনেক চেষ্টা করেও অনশন ভাঙাতে পারেননি কেউ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে গত ১৩ জানুয়ারি দিবাগত রাতে হলটির ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। সেই থেকে এ আন্দোলনের সূচনা। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের পুরো প্রভোস্ট কমিটির অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে ১৬ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও শিক্ষার্থী আন্দোলনে শামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে গেলে পুলিশকে বাধা দেয়া হয়। এতে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয় এবং এতে পুলিশ ও শিক্ষকসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন।
আগামীনিউজ/নাসির