উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া পিছপা হবেন না শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৩:৪৩ পিএম

সিলেটঃ ছয় দিন ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টরিয়াল কমিটি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে চলমান এ কর্মসূচি থেকে তারা পিছপা হবেন না বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে ফের বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মিছিল আর শ্লোগানে মুখর ক্যাম্পাস। এ সময় তারা ঘোষণা দেন, ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চলবে। 

মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বড়ুয়া বলেন, ‘শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। শিক্ষার্থীদের দাবি না মেনে উল্টো হামলা চালিয়েছে। এমন অযোগ্য ব্যক্তি ভিসি থাকতে পারে না, তার অপসারণ চাই।’

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এটা দেখে যদি আমাদের বিবেক জাগ্রত না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের বিবেক ঘুমিয়ে রয়েছে।

‘আজকে তাদের ওপর হামলা, কালকে আমাদের ওপর- এভাবে দিন দিন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা বেড়ে চলছে। আমাদের দাবি একটাই, উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।’

আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী সবুজ চন্দ্র দাস জানান, আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। ক্যাম্পাসের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ভিসির পদত্যাগই একমাত্র সমাধান।

প্রসঙ্গত, শাবিতে দায়িত্বহীন প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা নির্মূল করতে হবে এবং সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ও অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব এবং দায়িত্বশীল প্রভোস্ট কমিটি নিয়োগ দিতে হবে- এই তিন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রোববার ভিসিকে অবরুদ্ধ করা হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি মুক্তি পান। 

এ ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। এখন শিক্ষার্থীদের একমাত্র দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ। এই দাবিতে সোমবার থেকে তারা আন্দোলন করছেন। তালা ঝুলিয়েছেন ভিসির কার্যালয় এবং প্রশাসন ভবনে। এরপর বিকেলের দিকে আন্দোলনকারীরা ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাসভবনও ঘেরাও করেন।

এদিকে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) শফিউল আলম জুয়েলকে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ইয়াসির সরকার, সাব্বির আহমেদ, তানহা তাহসীনের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, রায়ট কার ও জলকামানসহ অন্যান্য পুলিশি যান সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে রায়ট কার ও জলকামানের গাড়ি রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করে। তবে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতয়েন রয়েছে। 

পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রক্তিগত কর্মকর্তা শফিউল আলম জুয়েল সাংবাদিকদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলেন, আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়ভার তিনি নেবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ারও ব্যবস্থা করবেন। এছাড়া শাবি শিক্ষার্থীদের সহিংসতার পথে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হলের সমস্যা নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পরদিন রবিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ ও হামলার বিচার দাবি করেন। 

পরে বিকাল ৪টায় আইআইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। এ সময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় লাঠিপেটার পাশাপাশি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে ভিসিকে উদ্ধার করে বাংলোতে পৌঁছে দেন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন। তবে শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামীনিউজ/বুরহান