আন্দোলনে উত্তাল শাবি, এবার উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ১২:৫৮ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

সিলেটঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনায় শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত ও হামলার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন।

এদিন সকাল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা  পরিচালক, প্রক্টরসহ প্রশাসনকে বয়কট ও পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। 

সকাল থেকেই ‘যেই ভিসি গ্রেনেড ছোড়ে, সেই ভিসির পদত্যাগ চাই’, ‘যেই ভিসি ছাত্র মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি গুলি ছোড়ে, সেই ভিসির পদত্যাগ চাই’, ‘শিক্ষার্থীর ওপর হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান এক হও এক হও’ স্লোগানে ক্যাম্পাস উত্তাল করে তোলেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আন্দোলনে প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশের হামলা কেন, তার জবাব দিতে হবে। ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করা চলবে না। আর প্রশাসন ক্যাম্পাস চালাতে ব্যর্থ হলে প্রশাসনিক ব্যক্তিদের পদত্যাগ করতে হবে। 

এছাড়া যেকোনও পরিস্থিতিতে আবাসিক হল ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আমাদের এক দাবি ‘যেই ভিসি আমাদের ওপর হামলা চালাতে পারে সেই উপাচার্যকে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাই না’। যতক্ষণ না পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে হল ছেড়ে দেওয়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা হলত্যাগ করব না।

এরআগে, রোববার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ভবনের তিন তলার ৩৩৩ নম্বর কক্ষে কিছু কর্মকর্তা ও শিক্ষকসহ তিনি অবস্থান করেন। বিকাল ৪টায় আইআইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। এ সময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

সন্ধ্যায় লাঠিপেটার পাশাপাশি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে ভিসিকে উদ্ধার করে বাংলোতে পৌঁছে দেন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন। 

তিনি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় দুপুরে সিন্ডিকেট সদস্যদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। এমনকি সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। কারণ ইতোমধ্যে দেশে করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের ওপর চলে গেছে। তবে অফিসিয়াল কাজ কিছুটা চলমান থাকবে।’

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার পর রাত ৮টার দিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে মূল ফটক তালাবদ্ধ করে রাখতে দেখা যায়। 

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, যেকোনও পরিস্থিতিতে তারা ক্যাম্পাস ছাড়বে না। এমনকি তাদেরকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বলায় প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওযার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, যতক্ষণ না স্বৈরাচার উপাচার্য পদত্যাগ করছেন, ততক্ষণ আন্দোলনের মাঠে থাকবেন তারা। শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল ও প্রভোস্টদের রুমেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

আগামীনিউজ/বুরহান