বাকৃবিতে কমছে নিরাপত্তা, বাড়ছে অনৈতিক কর্মকান্ড

তানিউল করিম জীম, বাকৃবি প্রতিনিধি জানুয়ারি ৭, ২০২২, ০৯:৫৮ পিএম
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে একদিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কমছে অন্যদিকে বাড়ছে অনৈতিক কর্মকান্ড। ক্যাম্পাসের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়, বৈশাখী চত্ত¡র, আম বাগান, আম তলা, লিচু বাগান, জব্বার রেল লাইনসহ বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগতদের অনৈতিক কর্মকান্ড বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আবার এই বহিরাগতদের দ্বারাই শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে হয়রানি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং শিক্ষার্থীসহ মোট নয় হাজার ৮০০ জন ক্যাম্পাসে বসবাস করছে। এছাড়া প্রতিদিন যোগ হয় প্রায় পাঁচ শতাধিক দর্শণার্থী। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে শহর থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার  প্রধান সড়ক ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে হওয়ায় দিন-রাত দ্রুত গতিতে চলাচল করে ভারী এবং মাঝারি যানবাহন। এই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে বাকৃবি নিরাপত্তা শাখা। কিন্তু বর্তমানে নিরাপত্তা শাখায় মাত্র ১১৪ জন নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে। এছাড়া আনসার রয়েছে ৬৬ জন। যা ১২০০ একরের এই বিশাল ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ঠ নয়। এ কারণেই বিভিন্ন সময় বহিরাগতদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের সাথে ঘটছে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ঘেঁষে এবং মেয়েদের হলের পিছন দিকে চলছে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড। এরূপ কর্মকান্ডের ঘটনাটি বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য খুবই লজ্জাজনক। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্ব স্থাপনাগুলোর নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশেষ করে ছবি তুলার জন্য শহীদ মিনার, মরণ সাগরের উপরে জুতো পড়ে উঠা, রেল লাইনের প্লার্টফর্ম, মুক্ত মঞ্চের সামনে, আম চত্বর, টিএসসি লেক, বৈশাখী চত্বর এলাকায় অনেক ছেলেমেয়েদের অশালীন ভাবে চলাফেরা এবং সন্ধ্যায় আমবাগানের দিকে অনৈতিক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে।

কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্ত অনুষদের শিক্ষার্থী ফারহানা জান্নাত ইমু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, নিজের ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? ৪জন মেয়ে বোরখা পরা এবং সম্পূর্ণ নেকাব করা অবস্থায় ঘুরতে বের হয় টি.এস.সি লেক ভিউতে। জায়গাটা ভালো লাগায় তারা নিজেরা ছবি তুলতে শুরু করে। এরপর কিছু বখাটে তাদের উদ্দেশ্য করে সাউন্ড, মেয়েদের ছবি তুলাসহ বিভিন্নভাবে তাদের হ্যারাজ করতে থাকে। ঘটনাটি সন্ধ্যায় হয়। অন্যদিকে আনুমানিক ৬.৩০ টার দিকে নেসক্যাফে চত্ত¡র থেকে বের হওয়ার পর দুইটা মেয়ে পিছু নেয় ৫/৬ টা ছেলে। পরে তারা বিভিন্ন ব্যাকসাউন্ড করতে থাকে পেছন থেকে। প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে পুরোটা রাস্তায় এই হ্যারাজমেন্ট চলতে থাকে। এছাড়া গত ২ ডিসেম্বর সাড়ে ৬ টায় নেসক্যাফে চত্ত¡র থেকে দুটো মেয়ের পিছু নেয় তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী। এরপর তারা প্রক্টর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে এই মেয়েদেরকে বিভিন্নভাবে হ্যারাজ করে এবং বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। এমনকি মেয়ে দুটো ভয়ে দৌড়ানোর সময় ও তারা তাদের পিছু  নেয়।

১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান অভিযোগ করে বলেন,  বহিরাগতরা মেয়েদের দেখে মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে বাইক স্টান্ট করে মোটরসাইকেল চালায়। যা বিপদজ্জনক এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়া তারা বিভিন্ন ভাবে মেয়েদের হয়রানি করে থাকে। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো কিছু ব্যবস্থা এখনো নেয়নি। যে কারণে এগুলো বেড়েই চলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা অফিসার মহিউদ্দীন হাওলাদার এ বিষয়ে বলেন,  আমাদের নিরাপত্তা কমী এখন কিছু কম আছে। করোনার কারণে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০ জনকে নতুন নিয়োগের জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের নিয়োগ হলে আমরা ক্যাম্পসকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। আমাদের নতুন একটি টহল গাড়ি দেওয়ার কথা সেটি দিলে আমরা আমাদের কাজের  অগ্রগতি আরোও বৃদ্ধি করতে পারবো।