খুলনাঃ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হলগুলো ৩৫ দিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরতে শুরু করেছেন। আগামী ৯ জানুয়ারি (রোববার) থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৭৮ তম (জরুরি) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ সকাল ১০টায় হল খুলে দেওয়া হয়। তবে ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
কুয়েট জনসংযোগ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম সোহাগ জানান, গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৭৯ তম (জরুরি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দেশনা দৃঢ়ভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা বিধির ১২, ১৩, ১৪, ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারাসমূহ এবং আবাসিক হলের নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। ছাত্র শৃঙ্খলা বিধির ১২ ধারা মোতাবেক পরিচালকের (ছাত্র কল্যাণ) পূর্বানুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থীদের যেকোনও প্রকার মিছিল ও সভা-সমাবেশসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমসমূহ বন্ধ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারসহ অ্যাকাডেমিক এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম বহির্ভূত যেকোনও প্রকার ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার ইত্যাদি টানানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কুয়েটের আবাসিক হলের নিয়মাবলীর ৩(প) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ব্যাচ বা তার পূর্ববর্তী ব্যাচসমূহের আবাসিক হলে বসবাসরত স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগ করতে হবে।
অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে, কুয়েটে শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ কয়েকজন ছাত্র তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ডাইনিং ম্যানেজার করার জন্য হল প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায়, ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করেন।
পরবর্তী সময়ে তারা শিক্ষককে ধরে নিয়ে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর শিক্ষক সেলিম দুপুরে খাবার খেতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান। বিকাল ৩টার দিকে স্ত্রী লক্ষ করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা ৪৪ শিক্ষার্থীকেই বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে চার জনকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাত জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার এবং হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আগামীনিউজ/বুরহান