এবছর জাবি ভর্তি পরীক্ষায় কতটা ভয়াবহ ছিল শিফট বৈষম্য

মাহবুব সরদার, জাবি প্রতিনিধি নভেম্বর ২৪, ২০২১, ১১:৪৯ এএম
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের  স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গত সোমবার শেষ হয়েছে।

তবে এবছরের  পরীক্ষার শিফট পদ্ধতি কারও ভাগ্য পরীক্ষা আবার কারও জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা নয় বরং ভাগ্যের চরম পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিটি শিফটের প্রশ্নপত্র ভিন্ন হওয়ার কারণে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন ভর্তিচ্ছুরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গত ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের (‘বি’ ইউনিট) ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট পাঁচটি শিফটে ৩২৬টি আসনের মধ্যে ৫ম শিফট থেকে সর্বোচ্চ ২১৭ জন এবং দ্বিতীয় শিফট থেকে সর্বনিম্ন ১২ জন ভর্তিচ্ছু মেধা তালিকায় স্থান পায়।

এর আগে গত ৯ ও ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জীববিজ্ঞান অনুষদের (‘ডি’ ইউনিট) পরীক্ষা ১০টি শিফটে অনুষ্ঠিত হয়। ৩২০টি আসনের মধ্যে ৫ম শিফট থেকে সর্বোচ্চ ১০৪ জন এবং ৩য় শিফট থেকে সর্বনিম্ন ১ জন মেধা তালিকায় স্থান পায়।

পরপর দুই ইউনিটের পঞ্চম শিফটে এমন ফলাফল শঙ্কায় ফেলেছে মেধাবী শিক্ষার্থীসহ সচেতন শিক্ষকদের।

এছাড়া আইবিএ-জেইউ’ ( ‘জি’ ইউনিট) ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলোজি’র ('এইচ’ ইউনিট) ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুইটি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘জি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৫০টি আসনের মধ্যে মেধা তালিকায় প্রথম শিফট থেকে ১৫ জন এবং দ্বিতীয় শিফট থেকে ৩৫ জন মেধা তালিকায় স্থান পায়। এছাড়া তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘এইচ’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৫৬টি আসনের মধ্যে প্রথম শিফট থেকে ২০ জন এবং দ্বিতীয় শিফট থেকে ২৩ জন ও তৃতীয় শিফট থেকে ১৩ জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে।

‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দিনাজপুর সরকারী কলেজের ছাত্র মুহিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিফট ভিত্তিক পরীক্ষায় আমাদের মেধার পরীক্ষা না দিয়ে ভাগ্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা যদি নিতেই হয় তবে প্রতি শিফটের জন্য আসনও নির্ধারিত করে দেওয়া হোক। আলাদা প্রশ্নপত্রে আলাদা পরীক্ষা দেওয়ার পরে একই মানে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হলে প্রকৃত মেধাকে অবম‚ল্যায়ন করা হয়। এ ধরনের অসম মেধা তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারে না।

ভর্তি পরীক্ষাতে শিফট বৈষম্যের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহবায়ক শোভন রহমান বলেন, 'ভর্তি পরীক্ষার মত অত্যধিক প্রতিযোগিতাম‚লক পরীক্ষায় খুবই কম নম্বরের ব্যবধানেই অনেক বড় বিপর্যয ঘটতে পারে। তাই এইখানে সবার জন্য অন্তত সমান ম‚ল্যায়ন প্রয়োজন। শিফট পধ্যতির মাধ্যমে সেই সমান ম‚ল্যায়ন নিশ্চিত করা কোন ভাবেই সম্ভব না। প্রশাসন চাইলে পরীক্ষার কেন্দ্রকে বিকেন্দ্রীকরণ বা বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করে এই জটিলতা দ‚র করতে পারে। এতে একই সাথে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও লাঘব হবে, বৈষম্য হবার সম্ভবনাও কমে যাবে।'

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অনেকবার বলেছি শিফট পদ্ধতি বাদ দিয়ে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে। এজন্য প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন শহরে পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে বৈষম্য কমবে এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমবে। আগামী বছর থেকে এক শিফটেই পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে। আগামী বছরে চেষ্টা করবো একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার। সেক্ষেত্রে এই বৈষম্যগুলো কমে যাবে বলে আশা করছি। সাভারের আশপাশে যেসব কলেজ আছে সেগুলোতে আমরা পরীক্ষা নিতে পারি।

আগামীনিউজ/নাসির