নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান স্মরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বশে শেখেন বাইক চালানো। পরিচিতি পান লেডি বাইকার হিসেবে।
নিজের জ্ঞানকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ট্রেনিং সেন্টারে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। অল্প সময়ে হয়ে উঠেন স্বাবলম্বী।ভবিষ্যতে একজন বড় উদ্যোক্তা হতে চান নাদিয়া।তিনি বলেন, অসহায় মেয়ে, নারীদের জন্য কাজ করবো।তাদের খারাপ সময়ে পাশে দাড়াবো।তাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করতে চান তিনি।
২০১৭ সালে লেডী বাইকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন নাদিয়া রহমান।ছোটবেলায় সাইকেল চালানো শিখেছেন যার ফলে অল্প সময়ে আয়ত্ত করে ফেলেন বাইক চালানো।পরবর্তীতে ট্রেনার হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালে।করোনা মহামারীতে ১৭ মার্চ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরে যান নিজ জেলা কুমিল্লায়।পরবর্তীতে তিনি আড়াই মাস পর জুন মাসের ১ তারিখ ট্রেইনার হিসেবে ট্রেইনিং সেন্টার উইংস অফ ড্রীম নামক কুমিল্লা লেডী বাইকার গ্রুপের যুক্ত হন।গ্রুপটি তার বান্ধবী আফরোজ সামিহার।বন্ধে বাসায় বসে না থেকে দুই বান্ধবী একসাথে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন।
কুমিল্লার লেডি বাইকার গ্রুপের ট্রেইনার হিসেবে জনপ্রিয়তা পান নাদিয়া।পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আয় করে হয়ে উঠেন স্বাবলম্বী।প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা প্রশিক্ষণ থেকে আয় করেন। আয়ের বেশিরভাগ অংশই তিনি তার পরিবারের জন্য ব্যয় করেন।তিনি বলেন,প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে অর্জিত আয়ের বেশখানিকটাই আমি আমার পরিবারের কাজে ব্যয় করেছি।এর মত প্রশান্তি আর মনে হয় কখনো কোন কিছুতে পাইনি।
ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে ১৫ দিনের কোর্সে ভর্তি নেওয়া হয়ে থাকে।যাদের ১৫ দিনের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন তাদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাস ও নেওয়া হয়ে থাকে।এক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়। প্রতি একমাস বা দেড়মাস পর পর রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য ফর্ম ছাড়া হয়।
রেজিষ্ট্রেশন শেষ হলে তাদের কে নির্দিষ্ট সময় ও শিখানোর জায়গা বলে দেওয়া হয়।এরপর শুরু হয় প্রশিক্ষণ।যারা সাইকেল চালাতে পারে তাদের জন্য ৩৫০০ টাকা এবং যারা পারে না তাদের জন্য ৪০০০ টাকা ফি নেওয়া হয়।যারা শিখতে আসেন তাদের ট্রেনিং সেন্টারের নিজস্ব নিজস্ব স্কুটি দিয়েই শিখানো হয় বলে জানান নাদিয়া।
কুমিল্লার লেডি বাইকার গ্রুপের ট্রেইনার হিসেবে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজ ক্যাম্পাস নোবিপ্রবিতে লেডি বাইকার ইচ্ছুকদের জন্য নোয়াখালী লেডি বাইকার গ্রুপ নামে ট্রেনিং সেন্টার শুরু করেছেন।
প্রশিক্ষণ এর অভিজ্ঞতা বিষয়ে নাদিয়া বলেন, বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ শুধু মেয়ে,নারীদের কেই দিয়ে থাকি।সব ধরনের বয়সের মেয়ে,নারী,মহিলারা প্রশিক্ষণ নিতে আসে।একেকজনকে ট্রেইনিং করানোর পর যখন তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাসিমুখে, তখন মনে হয় আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর নেই।
লেডি বাইকার হিসেবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানান নাদিয়া। তিনি বলেন, বিষয়টা অনেকেই সহজভাবে দেখতোনা।একটু বাঁকা চোখে তাকাতো,নেগেটিভ কমেন্ট অনেকেই করতো।সেসব পিছিয়ে ফেলে সামনে এগিয়ে চলে এসেছি আর কোন বাঁধাই আটকে রাখতে পারবেনা।প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে পরিবারের সদস্যদের সাপোর্টে লেডি বাইকার হিসেবে নাদিয়া কাজ করে যাচ্ছেন।তিনি বলেন,"আমার অনুপ্রেরণা আমার আব্বু,আমার ফ্যামিলির মেম্বাররা,যাদের অনুপ্রেরণায় আমার পথচলা।"
নতুন যারা বাইকার হতে চায় তাদের জন্য নাদিয়া বলেন,সবসময় সেইফটি মেইনটেইন করে বাইক স্কুটি চালাতে হবে।হেলমেট অবশ্যই পড়তে হবে সবসময় এবং শখ এর পাশাপাশি নিজেকে যেন কোন কাজে নিয়োগ করা যায় সে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে।
নাদিয়া রহমান কুমিল্লা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে অর্থনীতি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন।লেডি বাইকারের পাশাপাশি তিনি নাচ, গান, অভিনয়, কবিতা আবৃতিতে পারদর্শী।পাশাপাশি ক্যারাম,ব্যাডমিন্টন,ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় ও পারদর্শী।তাছাড়া প্রথম বর্ষ থেকেই বিভিন্ন সংগঠন এর সাথে জড়িত।নোবিপ্রবি থেকেই মাস্টার্স সম্পন্ন করার কথা জানান নাদিয়া।
আগামীনিউজ/নাসির